চট্টগ্রাম,১৩ অক্টোবর, ২০২৩:
প্রাচীন হরিকেল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বর্তমান চট্টগ্রাম জেলায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু হয়েছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের দেয়াঙ্গ পাহাড় এলাকায় চলছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে দেয়াঙ পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় আঞ্চল।
প্রাথমিকভাবে অল্প জায়গায় খনন কাজ শুরু করা হলেও এখন বিশাল এলাকাজুড়ে এর বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার কারণে প্রথমে দুই মাস খননকাজের সময় নির্ধারণ করা হলেও পুরো খননকাজ শেষ হতে আরও বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান।
জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে খননকাজ। আর বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গবেষণা চলে সেখানে।
খবরে জানা গেছে, জনশ্রুতি অনুযায়ী কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের দেয়াঙ পাহাড়ের বিশ্বমুড়া নামক স্থানে আরাকান রাজা বিক্রমের বাড়ি ছিল। গবেষণায় উঠে এসেছে আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরি, হাজীগাঁও, বটতলী ও কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান, জুলধা এলাকাজুড়ে সপ্তম-অষ্টম শতকে পণ্ডিত বিহার নামে একটি জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রও গড়ে ওঠে। ষোড়শ শতকের দিকে সেটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
খনন কাজে যুক্ত আছে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে অভিজ্ঞ খনন শ্রমিক। তারা মাটি খুঁড়ছেন, কেউ মাটি থেকে ইট সরিয়ে নিচ্ছেন, দেয়াল থেকে মাটি সরিয়ে নিচ্ছেন, ভাঙা ইট স্তূপ করে রাখছেন। এভাবে নানা কাজে ব্যস্ত সকলে।
খননে ভবনের ধ্বংসাবশেষের প্রমাণ উঠে আসছে।
দুজন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে মহাস্থানগড় থেকে আসা ১০ জন অভিজ্ঞ শ্রমিক খননকাজ করছেন। তবে কবেকার এসব ভবন তা এখনো জানা যায়নি।
কাজ শুরুর প্রথম সপ্তাহে সেখানে তিনটি চওড়া দেয়াল ও তিনটি মেঝের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
খননকাজ পরিদর্শনে জাপানি প্রত্ন তাত্ত্বিকরাও পরিদর্শন করেছেন বলে জানা যায়। এছাড়া ঢাকা স্থাপত্য ও প্রত্নতত্ত্ব শাখার প্রফেসর ড. সুরাইয়া আক্তার এবং ইউনেস্কো ঢাকা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজান ভাইজ দেয়াঙ্গের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
হরিকেল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল চট্টগ্রাম। এই অঞ্চল প্রাচীন পূর্ববঙ্গের একটি স্বাধীন জনপদ বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা, যার স্থায়ীত্বকাল ছিল নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রায় ৫ শত বছর। বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল ও চট্টগ্রাম বিভাগ এর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি, ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য জুড়ে হরিকেল বিস্তৃত ছিল।
Discussion about this post