চট্টগ্রাম, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩:
ঘূর্ণিঝড় হামুনে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, বাঁশখালী, সাতকানিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে হামুনের তা-বে কক্সবাজারে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অন্যসব এলাকাকে ছাড়িয়ে গেছে।
কক্সবাজারে দেয়াল ও গাছ চাপায় প্রাণ গেছে তিনজনের। আহত হয়েছেন কমপক্ষে কয়েক শ মানুষ।
২ ঘণ্টার তা-বে গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার পর থেকে শুরু হয় হামুনের তা-ব। ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো বিদ্যুৎবিহীন কক্সবাজারের অনেক এলাকা। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট, মোবাইল সংযোগ। মূল সড়ক সহ বিভিন্ন সড়কে গাছ পড়ে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার আবদুল খালেক (৪০), মহেশখালী এলাকার হারাধন দে (৪৫) ও চকরিয়া বদরখালী এলাকার আসকর আলী (৪৭)।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের তা-বের পর উপড়ে পড়া গাছপালা সরাতে বা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে মাঠে এখনো কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।
জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে, চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া, সদর রামুসহ বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়লেও তা দ্রুত সরিয়ে রাতেই যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক স্থানে বড় বড় গাছ সরানো সম্ভব হয়নি। জেলা শহরের ন্যায় কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদীয়া, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় এখনও ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এ কারণে মোবাইল যোগাযোগে জেলাজুড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। জেলা শহর ছাড়াও উপজেলাগুলোর সড়ক-উপসড়কে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিদ্যুৎ, নেটওয়ার্ক না থাকায় কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।
মহেশখালী উপজেলাতে ঘূর্ণিঝড় হামুন এর তান্ডবে ৪০টি বিদ্যুতেরর বড় ট্রান্সফরমার নষ্ট, শতাধিক বিদ্যুৎ এর খুটি ভেঙ্গে গেছে, ৫শত পানের বরজ, শত শত গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। বন বিভাগের সৃজিত বাগানসহ কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধানসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় হামুন’র তা-বে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অন্তত ৫ শতাধিক কাঁচাঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। হামুন’র তান্ডবে উপড়ে গেছে বহু গাছপালা ও ঘেরাবেড়া। বাতাসের তীব্রতায় ভেঙ্গে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি। পানির তোড়ে ব্রিজ, কালভার্ট ও সড়ক ভেঙ্গে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অন্তত ৫০-৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিনের চালা উপড়ে ফেলেছে। নি¤œাঞ্চলের ধান ও ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দুই ঘন্টার তা-বে কুতুবদিয়া উপকূল ল-ভ- করে ফেলেছে জনবসতি। রাত ৮টা হতে রাত ১০টায় দুই ঘন্টায় কুতুবদিয়া উপকূলের উপর বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় হামুনের ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে যাওয়া বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। বিশেষ করে কাঁচা ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে বেশি। গাছপালা ভেঙ্গে ও গাছ উল্টে পড়ে ছয় ইউনিয়নে ৫৫৭ টি কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ৩ হাজার চারটি ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে বলে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা নিশ্চিত করেন।
বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কুতুবদিয়া আবাসিক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত।
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর আঘাতে চন্দনাইশেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গাছপালা ও কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুৎ লাইনের। গাছ ভেঙে যান চলাচল ও বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ সড়কে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও লাইনের উপর গাছ পড়ে উপজেলার অনেক এলাকা এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৫টির অধিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে, ৬৫ স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে, ৩টা ট্রান্সফার পড়ে গেছে। ৬শ’র অধিক মিটার নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম বলেছেন, বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাস্তার উপর গাছপালা সারারাত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছে। বিভিন্ন এলাকায় ঘর বাড়ির উপর গাছপালা পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কোন কেউ আহত বা নিহত হওয়ার মত ঘটনা ঘটেনি।
Discussion about this post