চট্টগ্রাম,৭ নভেম্বর, ২০২৩:
চলতি বছর কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ৩,৭২২ রোহিঙ্গা সমুদ্রপথে পালিয়েছে। বাংলাদেশ শরণার্থী শিবির থেকে সমুদ্রপথে নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার রোহিঙ্গাদের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় আরো বেড়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সাহায্য সংস্থাগুলি VOA(voice of America-myanmar) কে বলেছে, যে এই সংখ্যা বাড়তে পারে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়, ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে বলেছে যে ১৫০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে একটি নৌকা গত শনিবার সকালে পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ায় অবতরণ করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইন্দোনেশিয়া কার্যালয় VOA কে রোহিঙ্গাদের অবতরণের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে।
ইউএনএইচসিআর বলছে, এ বছর এখন পর্যন্ত নৌকায় করে আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩,৭২২-এ পৌঁছেছে।
শরণার্থী সংস্থা আন্দামান সাগরে আটকা পড়া ইঞ্জিন ভাঙ্গা আরও দুটি নৌকার বেশ কয়েকটি রিপোর্ট পাওয়ার কথা জানিয়েছে। এমন নৌকায় ৪০০ বা তার বেশি লোক ধরে।
২০২২ সালে UNHCR ৩৭০৫ রোহিঙ্গার কথা বলেছে, যারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।
ডিসেম্বর এমন একটি সময় যখন সমুদ্র কিছুটা শান্ত থাকে। এমন সময়েই বেশিরভাগ রোহিঙ্গা চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র বাবর বেলুচ উল্লেখ করেছেন, আমরা ডিসেম্বরে কী ঘটতে চলেছে তা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না, তবে গত ২০২২ সালের শেষ তিনমাস ছিল তাদের পালানোর ব্যস্ত সময়।
রোহিঙ্গারা বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম। যাদের মধ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি বড় শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।
যার বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার গণহত্যার মুখ পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
এখন কেউ কেউ নৌকায় করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পালানোর চেষ্টা করে। পুরনো নৌকায় গাদাগাদি করে পালানোর চেষ্টায় এ পর্যন্ত কয়েক শতাধিক মারা গেছে। শরণার্থী ভর্তি পুরো নৌকা সমুদ্রে হারিয়ে গেছেও বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের শিবিরের খারাপ অবস্থাকে দায়ী করছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, সন্ত্রাস, স্বল্প খাবার, স্কুল না থাকাকে সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি শরণার্থীদের জন্য খাদ্য সহায়তার প্রধান উৎস। জুন মাস থেকে মাসিক খাদ্য সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে প্রতি মাসে জনপ্রতি ৮ মার্কিন ডলার করা হয়েছে। জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমানোর জন্য দাতাদের সহায়তার অভাবকে দায়ী করেছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গারা নিরাপদে মিয়ানমার ফিরে যেতে পারবে এমন আশা হারিয়ে ফেলছে। যেখানে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হচ্ছে।
যে কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বিপদজনক সমুদ্রযাত্রা করছে বলে জানান মোহাম্মদ রেজুয়ান খান নামে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী। তিনি বলেন, তার বোন এবং ভাতিজি সমুদ্রযাত্রার ঝুঁকিগুলো জানার পরও গত বছর নৌকায় করে পালিয়ে তারা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছিল।
বিগত বছরগুলোতে নৌকায় শুধু পুরুষ ও নারীরা যাত্রা করলেও ইউএনএইচসিআর বলছে, শিশুদের নিয়ে আরও পরিবার এখন একসঙ্গে ভ্রমণ করছে। এই বছর বিপজ্জনক ভ্রমণকারীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিশু।
ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র বাবর বেলুচ বলেছেন, ইন্দোনেশিয়াই একমাত্র দেশ যা রোহিঙ্গাদের নিতে ইচ্ছুক।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০২২ সালে যারা পালিয়ে গেছে তাদের মধ্যে ৩৪৮ মারা গেছে অর্থাৎ যারা নিখোঁজ ছিল। এরমধ্যে এ বছর ২২৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। খবর voa, ছবি: সংগৃহীত।
Discussion about this post