চট্টগ্রাম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪:
সাতকানিয়ায় ভিটে-বাড়ির সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি গুলিতে দুই বয়োবৃদ্ধ মহিলা, এক বৃদ্ধ ও বেধড়ক পিটুনিতে অপর এক যুবকসহ চার জন আহত হয়েছেন।
গত সোমবার (৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা নেয়ামত আলী পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধরা হলেন- উল্লেখিত এলাকার মৃত সত্তার মাঝির স্ত্রী মিনু আরা বেগম (৬০), আবুল হাসেমের স্ত্রীর দিলোয়ারা বেগম(৫৩), মৃত লাল মিয়ার ছেলে আবুল হাসেম(৬০) ও বেধড়ক পিটুনিতে আহত আকতার হোসেনের ছেলে মো. সিফাত (২২)। বর্তমানে গুলিবিদ্ধ ও আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে মিনু আরার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর থেকে পুনরায় হামলার আশঙ্কায় এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছেন।
পুলিশ ও আহতরা ঘটনাটি পূর্ব বিরোধের
জের বললেও স্থানীয়রা এওচিয়া ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু ছালেহ ও এ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের দ্বন্দ্বের ফসল বলে মনে করছেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মো. সিফাত বলেন, ঘরে বিদ্যুৎ না থাকায় বাড়ির সামনে মুদি দোকানে বসে আমরা কয়েকজন গল্প করছিলাম। এ সময় দুটি সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে ৮-১০ অস্ত্রধারী যুবক দোকানের সামনে নামে। পরে দেখি সোহেল, শাহাদাত, শাহ আলম ও ফারুক আমাকে ঝাপটে ধরে টেনে হিঁচড়ে পার্শ্ববর্তী অন্ধকার ঝোপের মধ্যে নিয়ে আমাকে লোহার রড, লাঠি, খুন্তি ও বন্দুকের বাট দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। আমার চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তারা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এতে আমার পাড়ার চাচা-চাচিসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন।
সিফাত আরও বলেন, আমার চাচা মো. আলীর সাথে আমাদের ভিটে-বাড়ি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধের জেরে তার (মো.আলী) ছেলে মো. সোহেলের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী কামরুল, ইসহাক, জসিম, জামশেদ ও কামালরা এ ঘটনায় অংশ নিয়ে গুলিবর্ষণ ও আমাকে মারধর করে।
গুলিবিদ্ধ আবুল হাসেম বলেন, আমার চাচাত ভাই মো. আলীর সাথে আমাদের ভিটে-বাড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তার ছেলে সোহেলের নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ ও মারধরের এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত মিনু আরার ছেলে স্থানীয় মুদি দোকানী মো. টিপু বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় দোকান বন্ধ করে দোকানের সামনে বসে সিফাতসহ কয়েকজন মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ সময় দু’টি টেক্সি যোগে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এসে সিফাতকে মারধর শুরু করে। তখন আমি দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়ে পাড়ার খবর দিলে পাড়ার লোকের সাথে আমার মাও এগিয়ে আসে। এ সময় অস্ত্রধারীদের গুলিতে আমার মায়ের বুক, জিহ্বা, মাথা ও পেটে গুলি লেগে গুরুতর জখম হন। তিনি এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে অস্ত্রধারীদের তিনি চিনেন না বলে জানান।
এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো.সোহেলকে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে অপর অভিযুক্ত কামরুল তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিজেরা নাটক সাজিয়ে আমার নাম জড়াচ্ছে। ঘটনার সময় আমি নগরীর চকবাজারে বসে কিছু লোকের সাথে কথা বলছিলাম। প্রয়োজনে আমার মোবাইল ট্রেকিং করলে বুঝা যাবে আমার অবস্থান কোথায় ছিল।
স্থানীয় মরজানা আক্তার, বেবি আক্তার ও তসলিমা আক্তারসহ একাধিক এলাকাবাসী জানান, ঘটনার পরপর এলাকার লোকজন অস্ত্রধারীদের ধাওয়া করলে তারা নিজেরাই ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে ট্যাক্সি যোগে পালিয়ে যায়। বর্তমানে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বর্তমানে এলাকায় পুরুষ লোক নাই বললেই চলে।
স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নবী হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে, ঘটনার পর পর এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক তার নিজস্ব ফেসবুক ভেরিফাইড পেজ থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান মো.আবু ছালেহকে ইঙ্গিত করে ‘অটোপাস জনপ্রতিনিধির’ ইন্ধনে প্রকাশ্যে গুলি করে আহতের কথা উল্লেখ করে একটা পক্ষে তার অবস্থান জানান দেন । এছাড়া পুলিশ প্রশাসনকে ইন্ধনদাতাসহ অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে অস্ত্র উদ্ধারের কথাও বলা হয়।
এ ব্যাপারে এঁওচিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সালেহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন জনপ্রতিনিধিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তার স্ট্যাটাসে স্পষ্ট হয়নি বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের দু’টি বিবাদমান গ্রুপ রয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যানের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন আরিফুল ইসলাম প্রকাশ মানিক। তিনি বর্তমানে জেল হাজতে আছেন। অপরদিকে, বর্তমান চেয়ারম্যান গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন কামরুল প্রকাশ কমরু মাষ্টার। বিবাদমান এ দু’গ্রুপের কারনে এলাকায় এসব রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটছে বলে তারা জানান।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রধারীদের ছররা গুলিতে মহিলাসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ ও অপর একজন পিটুনিতে আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনার পর কেউ এখনও থানায় অভিযোগ করেনি।
Discussion about this post