চট্টগ্রাম, ২১ এপ্রিল, ২০২৫:
দেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন বা চার হাজার ৮০৬ কোটি ডলারের রেকর্ড হয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে। তবে এই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। রিজার্ভ কমতে–কমতে ২০২৪ এর জুলাইয়ে নেমে যায় ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারে। ওই সময় মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া ছিলো আরও ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। এই বিবেচনায় রিজার্ভ আসলে ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। শেষ তিন বছরে রিজার্ভ কমেছে ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে গড় করলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬৯ মিলিয়ন বা প্রায় ৮৭ কোটি ডলার।
বর্তমানে নতুন করে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ পাওনা রাখতে দিচ্ছে না সরকার। আগের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে এখন আর বকেয়াজনিত জরিমানা গুণতে হচ্ছে না। এর মধ্যেও রিজার্ভ বেড়ে এখন ২১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আগের বকেয়া পরিশোধ করেও এভাবে রিজার্ভ বৃদ্ধির ওয়ান অ্যান্ড ওনলি কারণ নিঃসন্দেহে অর্থপাচার কমে যাওয়া। ব্যাপক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ সরকার দুর্বল হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিলো বোধহয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হওয়া। সরকার পতনের অন্যতম কারণ ছিলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় দুর্নীতি, ব্যাংক লুটের টাকা বিদেশে পাচারের অবাধ সুযোগ। মূলত অর্থপাচারই ছিল রাষ্ট্রের এক মরণব্যাধি।
পাচার রোধে সব সরকারের কঠোর অবস্থান বজায় থাকুক। বাংলাদেশ মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াক। এখন অর্থপাচার যে কমেছে সেটা বোঝার একটা বড় উপায় এই রিজার্ভ বৃদ্ধি। এখন হুন্ডি চাহিদা কমেছে। প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসছে। যে কারণে রেমিট্যান্সে রেকর্ড ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। নানা সঙ্কটের মধ্যেও রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ শতাংশের মতো। আগের মতো অর্থপাচার অব্যাহত থাকলে নিশ্চয় প্রতি মাসে রিজার্ভ কমতো। ডলারের দর না কমে আরও বাড়তো। বকেয়া পরিশোধ হতো না। জিনিসের দর আরও বেড়ে যেতো।
২০২১ সালের আগস্ট থেকে গতবছরের জুলাই পর্যন্ত ৩৬ মাসে যে পরিমাণ রিজার্ভ কমেছে সেটিকে স্ট্যান্ডার্ড বিবেচনায় হিসাব করলে (বকেয়াসহ) এখন রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামতো। ছোটো ব্যবসায়ীরা ডলারের জন্য হাহাকার করতো। সেই সুযোগে বড় ব্যবসায়ীরা ‘সিন্ডিকেট’ করে পণ্যের দর আরও বাড়িয়ে দিতো। এভাবে আপনার–আমার পকেট ফাঁকা করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতো। তারা এখন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রুপ! জিনিসের দর কমায় এদের কিছু যায় আসে না। এরকম ইনকাম বন্ধ এটাই তাদের জন্য ঝামেলার।
#লেখাটি ওবায়দুল্লাহ রনির ফেসবুক থেকে নেয়া। তিনি দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার।