চট্টগ্রাম, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২:
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গত এক বছরে ২২০ জন আরসা সদস্য সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৮৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ে অংশ নেয়া আজিজুল হক সহ জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব নিয়েছিল এপিবিএন। শুধুমাত্র রোহিঙ্গা শিবিরে দায়িত্ব পালনের জন্য ১৪ ও ১৬ দুটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন নিয়ে গত এক বছরে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) তাদের বিভিন্ন অর্জন নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায়। উখিয়ার কোটবাজারের ১৪ এপিবিএন সদর দপ্তরে এ মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করা হয়।
এ সময় ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি মোঃ নাইমুল হক পিপিএম তাদের বিভিন্ন অর্জনগুলো তুলে ধরেন। তিনি গত এক বছরে তাদের দায়িত্বাধীন ১৫টি ক্যাম্প এলাকা থেকে ২২০ জন কথিত আরসা সদস্য সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৮৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান। যেখানে ২০২ জন মাদক কারবারি রয়েছে। তাদেও থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫০ পিস ইয়াবা, ৪০ কেজি ২০০ গ্রাম গাঁজা, ৪৪৭ মিনিক্যান বিদেশি বিয়ার, দেশি ৫ বোতল মদ, বিদেশি ৮৫০ মিঃলিঃ তরল মদ।
এসব ঘটনায় ১৮৬ টি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।
এছাড়া অভিযানে ৭২ জন অবৈধ অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১৪টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২০০টি বিভিন্ন প্রকারের দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সংশ্লিষ্ট থানায় এসব ঘটনায় অভিযুক্তদেও বিরুদ্ধে ২৩ মামলা হয়েছে।
তবে এপিবিএন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও মামলাসহ আইনি প্রক্রিয়া আগের মতো জেলা পুলিশের অধীনেই আছে।
সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়ে এসপি জানান, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত গ্রেপ্তার ৪৬০ জনকে বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়। ধৃতদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১০ লাখ ৯১ হাজার ৩০০ টাকা অর্থদ-ে দ-িত করা হয়। ৯৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- প্রদান করা হয়।
এছাড়া কালোবাজারের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সামগ্রি, ঔষধপথ্য উদ্ধারের কথাও তুলে ধরেন। সেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে মোট ২৩৩ টি। এছাড়া তারা অভিযান চালিয়ে গত বছরের ১৯ জুন ৩টি স্বর্ণের বার সহ ৮০৪ গ্রাম স্বর্ণালংকার, ২৬ লাখ ৩ হাজার ১২০ টাকা, ৩১ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ মিয়ানমার (মুদ্রা) কিয়াত উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রুজু করা হয়।
খুনোখুনির ঘটনায় গত ১ বছরে এপিবিএন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ে অংশ নেয়া আজিজুল হক সহ জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। গত বছরের ২২ অক্টোবর ৮ এপিবিএন’র আওতাধীন ১৮ নং ক্যাম্পে দারুল উলুম নাদাওয়াতুল উলামা আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ৬ খুনের ঘটনায় জড়িত আরাফাত উল্লাহকে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সপ্তাহের মাথায় গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় ১৪ এপিবিএন পুলিশের বিশেষ দল। এছাড়া এপিবিএন ড্রোন অভিযান চালিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি কথিত আরসার শীর্ষ নেতা আতাউল্লাহ জুনুনীর সৎভাই শাহ আলীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এসময় শাহ আলীর নিকট থেকে অস্ত্র, ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানান।
সভায় এসপি নাইমুল হক ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের কোন বাহিনী কিংবা গ্রুপ যাতে গড়ে না উঠে এজন্য এপিবিএন পুলিশ সর্বদা সজাগ রয়েছে বলে জানান। মাদক, চোরাচালান, কালোবাজারি, অস্ত্র পাচার রোধ এবং রোহিঙ্গাদের দ্বারা কোন স্থানীয় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়- সেসব ব্যাপাওে তারা সদা সতর্ক বলে জানান। সভায় আরোও বক্তব্য রাখেন, ১৪ এপিবিএন’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শরীফুল ইসলাম, উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম আনোয়ার হোসেন, পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য ২০১৮ সালে এপিবিএন ১৪ এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বর এপিবিএন ১৬ নামে দুটি নতুন ইউনিট চালু করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দুই ইউনিটে আলাদা করে জনবল পদায়ন করা হয়। শুরুওত প্রায় ১২ শ’ পুলিশ সদস্য এতে সংযুক্ত করা হয়েছিল। যেখানে নএপিবিএন-এ অধিনায়কের দায়িত্বে আছেন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।
Discussion about this post