চট্টগ্রাম, ২৯মার্চ,২০২২:
চট্টগ্রামে বাংলা প্রচলন উদ্যোগ জোরালো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। ঘোষণা করতে যাচ্ছে নতুন কর্মসূচি। এরমধ্যে আগামী জুন থেকে সাইনবোর্ড, নামফলক, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড সহ সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত না হলে তারা নিজেরাই আইনের আওতায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, নামফলক, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
বাংলা প্রচলন উদ্যোগের প্রধান সংগঠক মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র- ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা বাংলা প্রচলন নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে যেমন সহযোগিতা আশা করেছিলাম তা পায়নি। বাংলা প্রচলনের বিষয়টা হচ্ছে আদালতের নির্দেশ। কিন্তু যথাযথ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, সহযোগিতা না পেলে যে আমরা বসে থাকব তা নয়, আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। এজন্য যারা বাংলা ভাষা ব্যবহার করছে না তাদের প্রতিষ্ঠান, অফিস বা দোকানে আবার নেটিশ দিবেন বলে তিনি জানান। কাল ৩০ মার্চ সকালে এই উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এফ রহমান হলে আয়োজন করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন। যেখানে তাদের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরা হবে।
২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রামে বাংলা ‘ভাষা প্রচলন উদ্যোগ’ বিলবোর্ড, নামফলক, ব্যানার, ফেস্টুন, সাইন বোর্ড ইত্যাদি ৬০ শতাংশ বাংলায় লেখার কর্মসূচি দিয়ে চট্টগ্রামে সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছিল। এজন্য গত ৪/৫ বছরে সংগঠনটি গণ প্রচারণা, পথ সভা ও প্রচার পত্র বিলি করা, নোটিশ দেওয়া, সাইবোর্ডে কালি দেওয়া সহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করার জন্য। বিশেষ করে এই কর্মসূচি ফেব্রুয়ারি মাসে জোরালো করা হলেও এবার জানুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি শুরু করা হয়। এরপর এ বছর কর্মসূচিতে আর কোনো ছেদ রাখা হয়নি। ফেব্রুয়ারির পর মার্চ জুড়ে কর্মসূচি চালিয়ে গেছে। সামনে আরও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে।
অন্যান্য বছর শুধু ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে তারা বাংলা প্রচলন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে ৬০ শতাংশ বাংলায় লেখার জন্য চট্টগ্রাম মহানগরের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদালতের নির্দেশ মানার আহ্বান জানিয়েছিল। সচেতনতা কর্মসূচিতে তাদের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় সাইনবোর্ডে কালো রঙে ঢেকে দিয়েছিল। পরে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
বাংলা প্রচলন উদ্যোগের সংগঠকরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও এই ব্যাপারে খুব বেশি তৎপর নয়। তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কিছু অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। মনে হচ্ছে, তারা রাজনৈতিক কারণে আর বেশি সামনে এগোতে চাই না।
অথচ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যমান সাইবোর্ড,পরবর্তি ৩০ দিনের মধ্যে বাংলা ভাষায় রূপান্তরের নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল। এরপরের বছর ১ ফেব্রুয়ারি আর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্থাটি। তাতে বলা হয়, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কেনো প্রতিষ্ঠানের নামফলক, সাইনবোর্ড, ব্যানার ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় লেখা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এসব তৎপরতা এখন আর তেমন দেখা যায় না। যদিও গত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলা ভাষা প্রচলন উদ্যোগের কিছু কিছু কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। একই সাথে বিভিন্ন দোকান ও প্রতিষ্ঠানে বাংলা প্রচলন উদ্যোগের নেতৃবৃন্দের সাথে সচেতনতা কর্মসূচিতেও অংশ নেন।
যদিও দোকান সহ সকল প্রতিষ্ঠানের নামফলক ও সাইনবোর্ডের অনুমতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনই দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন আইনগতভাবে এ কাজটি সংশ্লিষ্টদের বাংলা ভাষা ব্যবহারে বাধ্য করতে পারত আইনের আলোকে- এমন অভিমত সচেতন নগরবাসীর।
যেখানে ১৯৮৭ সালের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রচলন আইন অনুযাযী অফিস, আদালত, গণমাধ্যম সহ সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারের আইনি বাধ্য বাধকতা রয়েছে।
চট্টগ্রামে ২০১৮ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন উদ্যোগ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত শত শত নগরের বিভিন্ন স্পটে শত শত পথসভা, র্যা লি, লিপলেট বিতরণ, সাইনবোর্ডে কালি লাগানো, প্রচার পত্র, সংবিধান, আইনও উচ্চআদালতের কপি বিলি করা সহ নানা কর্মসূচী পালন করেছে। বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকদের অনুরোধ করে আসছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, প্রগতিশীল সংগঠন সমূহের সমন্বয়ে চট্টগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক, লেখক ডা. মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলা প্রচলন উদ্যোগ চট্টগ্রামে নিরলসভাবে কাজ করছে।