চট্টগ্রাম, ১৩ এপ্রিল, ২০২২:
১৮ বছর পর রায় হয়েছে বহমাত্রিক লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার। এই ঘটনায় চার জঙ্গিকে ফাঁসির হুকুম দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি। দ-প্রাপ্তরা হল-কারাগারে থাকা দুই আসামি মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ। তারা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য। রায়ের সময় তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ফাঁসির দ-প্রাপ্ত অপর দুই আসামি পলাতক। তারা হল- নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির অমর একুশে বই মেলা থেকে বের হয়ে টিএসসির দিকে যাওয়ার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে বিজ্ঞানমনস্কতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পক্ষে লেখা হুমায়ুন আজাদকে ইসলামি মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা তাকে নৃশংসভাবে আক্রমণ করে। এই ঘটনায় হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির পর দিন ঢাকার রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
মামলার অভিযোগ পত্রে জানা যায়, মিজানুর ও নূর মোহাম্মদ ব্যাগ থেকে চাপাতি-ছুরি বের করে হুমায়ুন আজাদের ঘাড়, মাথা, মুখ, গলা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করেন। এ সময় আনোয়ারুল ও নুরুল্লাহ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়ান। এভাবে হামলার পর হামলাকারীরা সাধারণ লোকজনের সঙ্গে মিশে যান। রাত ১১টার দিকে শায়খ আবদুর রহমানকে এই ঘটনা মুঠোফোনে জানায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনার শুরুতে বাংলা একাডেমি ও টিএসসির মাঝামাঝি অবস্থানে পৌঁছালে সানির নেতৃত্বে তার সহযোগীরা হুমায়ুন আজাদকে ঘেরাও করে ফেলেন।
গুরুতর আহত হুমায়ুন আজাদ কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর মৃত্যু থেকে ফেরত আসলেও পর ওই বছর আগস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান । পরে ১২ আগস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মৃত্যুর পর হত্যাচেষ্টা মামলাটি হত্যা মামলা হিসাবে নেওয়া হয়।
আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল তখন জঙ্গিরা। দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নষ্ট করার জন্যে এবং ধর্মান্ধতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসামিরা নৃশংসভাবে হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়েছিল।
নিয়ম অনুযায়ী এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে সাত দিন সময় পাবেন আসামিরা। তবে আপিল করতে হলে পলাতক আসামিদের আত্মসমর্পণ করতে হবে।
২০০৪ সালে তার ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে মৌলবাদীরা হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। ভাষা বিজ্ঞানী, বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ তার লেখার কারণেই অনেক আগে থেকে প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। সূত্র: সংবাদ মাধ্যম।
Discussion about this post