চট্টগ্রাম,১৪ এপ্রিল, ২০২২:
যাক পুরাতন স্মৃতি
যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাস্প সুদূরে মিলাক
-এ বছর অশ্রুবাস্প দূরে ঠেলে দিয়েছে মানুষ। বাঙালিরাও। দুই বছরের বেশি সময় বৈশ্বিক করোনা মহামারি কোভিড -১৯ মোকাবেলা করতে গিয়ে বিশ্ববাসী ক্লান্ত। এই মহামারিতে মানুষ স্বাস্থ্যগত যেমন ঝুঁকিতে পড়েছে তেমনি সারা বিশ্বে দেখা আর্থিক বিপর্যয় সহ মানবিক বিপর্যয়।
তবু সকল বিপর্যয় অনেকটা দূরে ঠেলে, রোগশোক শ্রান্তি, ক্লান্তি ও হতাশাকে ভুলিয়ে দিতে এসেছে ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। এসেছে ১৪২৯ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ, পূর্বাকাশে উঠেছ আজ পহেলা বৈশাখের নতুন সূর্য। নতুন আশার বার্তা নিয়ে। প্রাণের পয়লা বৈশাখ আশা ও উদ্দীপনা নিয়ে।
উদ্দীপনা ঘোষণা করেছে সারাদেশে নববর্ষ ও পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বর্ষ পরিক্রমায় বাঙালি জাতির সামনে প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে ফিরে আসে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার মহাধ্বনি – ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের সুর মূর্চ্ছণা।
তা চির নতুনের বার্তা বহন করে। জীর্ণ-পুরাতন, অশুভ ও অসুন্দরকে পেছনে ফেলে নতুনের কেতন উড়িয়ে বাঙালি জাতি নববর্ষকে বরণ করে এই গানে।
এভাবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় যাত্রা শুরু হলো আরও একটি নতুন বছরের। ১৪২৮ পেরিয়ে ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। বৈশ্বিক অতিমারি করোনার প্রাদুর্ভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ও ম্রিয়মান হয়ে আসায় এবার নগরীসহ দেশজুড়ে মানুষ বর্ষবরণের উৎসবে মেতে উঠে।
এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় দিনে দিনে পয়লা বৈশাখ হয়ে ওঠেছে এক সর্বজনীন সাংস্কৃতিক আনন্দ-উৎসবে। ধর্ম ও সম্প্রদায়গত পরিচয় নির্বিশেষে বাংলা ভূখ-ের সব মানুষের প্রাণের উৎসব আজ।
পয়লা বৈশাখের উৎসব শুরুর দিকে ছিল মূলত গ্রামাঞ্চলকেন্দ্রিক। গ্রামীণ মেলা, লোকজ নানা ধরনের খেলাধুলা ও নৃত্য-গীত ছিল উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। দিনে দিনে এই উৎসব শহরাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে পয়লা বৈশাখের উৎসবের আড়ম্বর শহরগুলোকে ঘিরেই বেশি পরিলক্ষিত হয়। রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে সূচিত বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মত চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আজ পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে চট্টগ্রামেও মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে রঙিন করে তুলতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটেও আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইন্সস্টিটিউটের সামনে থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় শুরু হয়ে নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকা ঘুরে আসে তাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মঙ্গল শোভাযাত্রা শিল্পকলা থেকে বের হয়ে নগর প্রদক্ষিণ করে। এতে অংশ নেয় শিশু বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
নগরীর ডিসি হিলে ছিল সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আয়োজনে নববর্ষকে বরণের নানা অনুষ্ঠান। এছাড়া সিআরবি’র শিরীষতলায় চট্টগ্রাম নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে নববর্ষকে বরণ করা হয়।
উৎসবের নিরাপত্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
তবে এবার পবিত্র রমজান মাসে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন হওয়ায় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়।
Discussion about this post