চট্টগ্রাম, ০৫ জুন, ২০২২:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আজ দুপুর পর্যন্ত উদ্ধার কার্যক্রম চলছিল। যেখানে দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করতে দেখা গেছে। দুপুর পর্যন্ত লেলিহান আগুন না থাকলেও ডিপোর ভেতরে খণ্ড খণ্ড আগুন জ্বলছিল। একই সাথে ফায়ার সার্ভিসের সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনী।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো বিএম কন্টেইনারে অগ্নিকাণ্ড ও ভয়াবহ বিষ্ফোরণে ৪১ জন নিহত হয়েছেন। সময় যত গড়াচ্ছে ডিপোর ধ্বংসস্তূপ থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে ৬ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য আছেন। আহত ও দগ্ধ শতাধিক মানুষকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম ক্যান্টমেন্ট হাসপাতালও আহতদের চিকিৎসার জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর ঘণ্টা খানেক পর কেমিক্যালের কন্টেইনারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের আগুন যতক্ষণ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহযোগিতা করবে। আজ রবিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের একথা জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে রাত ১০টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সব সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পাশে পাবেন। আমরা সারারাত প্রস্তুত ছিলাম, ডিসি-এসপি সকালে বলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এখানে চলে আসি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে শোক প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদ। আজ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধিুরী এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ।
প্রধানমন্ত্রী আজ এক শোক বার্তায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, বি্এম ডিপোতে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের সকলকে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা দিচ্ছে। জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রহমান বলেন, নিহত শ্রমিকদের ২ লাখ টাকা ও আহতদের চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে।শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান আজ দুপুরে এই ঘোষণা দেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে তিনি জানান।
এদিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান গতকাল বলেছেন, কি কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করছি। নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হতাহতদের পাশে থাকব বলে বিএম ডিপো। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। এ দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছে তাদেরকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। পাশাপাশি সকল হতাহতের পরিবারের দায়িত্ব নেয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই সহায়তা করা হবে। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সবাই পাশে থাকুন।
Discussion about this post