চট্টগ্রাম, ১৯ জুন, ২০২২:
আষাঢ় এসেছে অবিরল বৃষ্টির বার্তা নিয়ে। যে কারণে দেশব্যাপী প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চট্টগ্রামেও এই বর্ষণ অবিরাম চলছে। যেন থামাথামি নেই। লাগাতর বর্ষণে তলিয়ে গেছে গোটা চট্টগ্রাম নগরী।
গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের আকবরশাহ ও পাহাড়তলীতে পাহাড় ধসে ৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
এদিকে পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা এ পর্যন্ত ১৮০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। রোববার (১৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত পূর্ব ফিরোজশাহের ১ নম্বর ঝিল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়। সেখানে কাজ করছে- ফায়ার সার্ভি
স, র্র্যব পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা।
কয়েকদিন ধরে অব্যাহত থাকা টানা ভারী বর্ষণের মধ্যে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় মহানগরীতে দেশের সর্বোচ্চ একশ’ ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি বর্ষা মৌসুমে এখন পর্যন্ত নগরীতে এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
জলজটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নগরজীবন। বিভিন্ন নি¤œ এলাকার সড়ক ডুবে গেছে জলাবদ্ধতায়। নগরের দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট এলাকার সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে থাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লাইওভারের উপরেও আটকা পড়েছে শত শত গাড়ি। ফলে বিভিন্ন রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিস ফেরত মানুষ ও রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন গন্তব্যে। তিনদিনের ভারী বর্ষণে নগরের চকবাজার, অক্সিজেন, পাঁচলাইশ রোড, শোলকবহর, বাদুরতলা, মেহেদীবাগ, আগ্রাবাদ, রাহাত্তারপুল, খাতুনগঞ্জ, রহমতগঞ্জ, হালিশহর ও নয়াবাজার এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সকালেও অফিস ও গার্মেন্টসমুখী কর্মীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলেও কমেনি বৃষ্টি। ফলে দিনভর ভারী বর্ষণে সড়কে জমে থাকা হাঁটুপানিতে বিপাকে পড়েছেন তারা। কোথাও কোথাও কোমর পানি, আর কোথাও কোথাও বুক পর্যন্ত জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, চারদিকে থৈ থৈ করছে পানি। যেখানে আগে হাঁটু পানি উঠতো সেখানে এখন কোমর সমান পানি। বাসা-বাড়ি, দোকানপাটে পর্যন্ত পানি ঢুকে পড়েছে। দুই নম্বর গেট দিয়ে গাড়ি চলছে এক কোমরের ওপরে পানি মাড়িয়ে। এছাড়া মুরাদপুর ও চকবাজারে সেই পুরোনো দৃশ্যই দেখা গেছে। কোমর সমান পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। বৃষ্টির কারণে ড্রেনগুলোতে পানির স্রোত সৃষ্টি হয়েছে। নালা-নর্দমায় পলিথিন ও আর্বজনা জমে থাকায় পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় জমে আছে পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশজুড়ে সক্রিয় রয়েছে। যার প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে একটানা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। চলতি মাসের শেষ কিংবা জুলাইয়ের শুরুতে ফের বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রচারিত আজ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা বা দৃশ্যপটে উল্লেখ করা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সাথে প্রবল বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়াও বিভাগের কয়েকটি অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সীতাকু- ও রাঙামাটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শতকের ঘর ছাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সীতাকু-ে একশ’ ৩২, রাঙামাটিতে একশ’ ২৩, সন্দ্বীপে ৪৬, ফেনীতে ৬৩, কুতুবদিয়ায় ৮৮ এবং টেকনাফে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বাইরে ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণায় ৫৪, বন্যাকবলিত সিলেটে ৬৬, রংপুরের তেঁতুলিয়ায় ৬০, বরিশালে ৮০ এবং ভোলায় ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অবিরাম বৃষ্টিতে দেশের প্রায় ১১টি জেলায় বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
Discussion about this post