চট্টগ্রাম, ২৪ জুন, ২০২২:
রাত পোহালেই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের উদ্দীপনায় ঘুম ভাঙ্গবে পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের। আর এর কিছুক্ষণ পর উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আগামীকাল শনিবার সকালে পদ্মা সেতুর প্রথম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর তিনিই প্রথম সেতুর টোল দিয়ে গাড়ি করে সেতু পার হবেন।
মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ ও উদ্বোধনের ফলক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম পদ্মা সেতু পেরিয়ে যাবেন ওপারে শরীয়তপুরের জাজিরায়। সেখানে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় দুপুরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন দলেরও প্রধান শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনন্দে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ সবচেয়ে বেশি আনন্দে আত্মহারা। কারণ দক্ষিণাঞ্চলকে গোটা দেশের সঙ্গে সংযোগ করতে এই সেতুর স্বপ্ন ছিল এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের।
আর এই সেতুর জন্য কয়েকদিন ধরে চলছে পদ্মার দুই তীরে বর্ণিল আয়োজন। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সড়ক-মহাসড়ক। উৎসবের ঝর্ণাধারা, আতশবাজি যেন সর্বত্র।
সেতু নিয়ে শুরু থেকে আলোচনা-সমালোচনা, বিতর্ক কম হয়নি। দেশে বিদেশে এই সেতু নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক সহ উন্নয়ন সহযোগী আর্থিক ঋণ দেওয়ার কথা বলেও আজগুবি দুর্নীতির কথা বলে ঋণ বন্ধ করে দেয়। পরে কানাডার আদালতের রায়ে পরাজয় হয় বিশ্বব্যাংকের। এমনি আর সেই থেকে শত বাধা পেরিয়ে এই স্বপ্ন সেতু নির্মাণে পিছু হটেনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু উদ্বোধনে তিনি সবাইকে সঙ্গে রাখতে চেয়েছেন। এজন্য দাওয়াত দিয়েছেন বিরোধিতাকারীদের। তাদের মধ্যে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুচের নাম বার বার বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
সরকারের, সংসদের, বিচার বিভাগের, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা থাকবেন উদ্বোধনীতে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দেশে কর্মরত কূটনীতিকদের, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত বিশিষ্টজনদের।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আর পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্পের একটি প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে এক বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
শাহবাজ শরিফ বলেন, ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ। এটি বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই ও স্থায়ী উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, পদ্মা বহুমুখি সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্তিতে আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সে দেশের জনগণকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাষ্টপ্রধানের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
উদ্বোধনকে ঘিরে পদ্মা সেতু ও দুই প্রান্তের আশেপাশের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
উৎসব শুধু পদ্মা সেতুকে ঘিরে পদ্মা পাড়েই নয়। সারাদেশে এই উৎসব হবে। চট্টগ্রামও যুক্ত হবে এই উৎসবে। যুক্ত হবে চট্টগ্রামবাসীও।
তাই আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি প্রশাসনও দিনটি উদযাপনে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সবমিলিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ঢেউ চট্টগ্রামেও আঁচড়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সকাল ৯টা থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৯টি স্পটে অবস্থান নিবে। সেখানে এলইডি টিভিতে (বড় স্ক্রিনে) পুরো অনুষ্ঠান দেখাবে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই সেখান থেকে সরে গিয়ে একই স্পটে বিকালে আবারো জমায়েত হবেন নেতাকর্মীরা। বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা করবেন স্ব-স্ব ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগ। নগরীর স্টিলমিল মোড়, আগ্রাবাদ মোড়, অলঙ্কার মোড়, অক্সিজেন মোড়, জিইসি মোড়, আন্দরকিল্লা, জামালখান, বহদ্দারহাট মোড় এবং নিউমার্কেট মোড়ে জমায়েত হবেন নেতাকর্মীরা।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ: দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এদিন জেলা আওয়ামী লীগের আন্দরকিল্লা দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা শুনবেন।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ : নগরীর দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জমায়েত হবেন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ। সেখানে নেতাকর্মীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড় স্ক্রিনে নেতাকর্মীরা যাতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ঘোষণা শুনতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরে আনন্দর্যালি করবেন দলটির নেতাকর্মীরা। দোস্ত বিল্ডিং ও আশপাশের এলাকা আলোকসজ্জা করা হবে।
জেলা প্রশাসন : সকাল ৮টা থেকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন জেলা প্রশাসন। সকাল সাড়ে ৮টায় নির্ধারিত আসনে অতিথিরা উপস্থিত হবেন। সকালে ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু : বাংলাদেশের সাহসের প্রতীক’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ১০টায় প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে মূল অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন মাওয়া প্রান্তের মূল অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত হবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে মাওয়া ও জাজিরায় উদ্বোধনী ঘোষণা, ফলক উম্মোচন ও মোনাজাতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানমালা শেষ হবে। বেলা ১১টায় আবারো চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। কনসার্টে চট্টগ্রামের কয়েকটি ব্যান্ড গান পরিবেশন করবেন। সন্ধ্যা ৭টায় বর্ণিল আতশবাজি ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম প্রান্তে এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে যুক্ত হবেন জেলা প্রশাসনের অতিথিরা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) : পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ উৎসব পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সকাল ৯টায় ইন্টারন্যশনাল কনভেনশন সেন্টারে এই কর্মসূচি পালিত হবে।
সিএমপি: চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সকালে আনন্দ র্যালির আয়োজন করেছে। এভাবে প্রায় সকল সরকারি দপ্তর পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হবে।
জাতির স্বপ্নপূরণ ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞে সময় বৃদ্ধির সাথে দফায় দফায় বেড়েছে ব্যয়ও। এসব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে নানা মহলের পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যেও কৌতূহলের শেষ নেই। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, সেতুর সংশ্লিষ্ট সব অবকাঠামো নির্মাণে ৩০ হাজার একশ’ ৯৩ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের ব্যয় এই অঙ্কের হলেও মূল সেতু নির্মাণে এর তিন ভাগের এক ভাগ খরচ হয়েছে। অনেক টাকা খরচ হয়েছে নদীশাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পুনর্বাসন প্রকল্পসহ অন্যান্য খাতে।
এদিকে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ ‘পদ্মা সেতু’ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার দিনকে বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : ইন্টানেট থেকে সংগৃহীত।
Discussion about this post