চট্টগ্রাম, ০৬ আগস্ট, ২০২২:
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর আজ শনিবার, ৬ আগস্ট রাতে গণ পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা কিলোমিটার প্রতি দূর পাল্লার বাসে ৪০ পয়সা ও নগরে ৩৫ পয়সা কওে বাড়ানো হয়েছে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ সড়ক পরিবহন মালিকদেও সাথে বৈঠকের পর এই বাড়তি বাড়ার নির্ধারণের কথা জানায়। বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূও মোহাম্মদ মজুমদার ভাড়া নির্ধারণের এই তথ্য সংবাদ মাধ্যমকে জানান। এতে দূর পাল্লার বাসে আগের ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সার সাথে প্রতি কি.মিটারে যোগ হবে ৪০ পয়সা ও ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে আগে ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সার সাথে যোগ হবে ৩৫ পয়সা।
এদিকে আজ জ্বালানি তেলের বাড়তি মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক সংগঠন ও যাত্রী, গ্রাহক কল্যাণমূলক সংগঠন। সমাবেশ ও বিভিন্ন কর্মসূচীতে বাম দলগুলো বলেছে,
সরকার আইএমএফ’কে খুশি করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে উঠবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে গণ পরিবহনের ভাড়া বাড়ার পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম আবার বাড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।তারা বলেন, গণপরিবহন, পণ্য পরিবহন, কৃষি সেচসহ সামগ্রিক অর্থনীতি ও উৎপাদন মারাত্মক নেতিবাচক ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এর ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ ও দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
এ ব্যাপাওে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন সংবাদ মাধ্রমকে বলেছেন, সরকার যখন কোনো পণ্য সরবরাহ করে সেই পণ্য বিক্রিতে লোকসান হলে দাম বাড়ানো সমর্থন করা উচিত। আমরাও সমর্থন করি। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে, তখন এত বেশি মূল্য বৃদ্ধি সমর্থন করা যায় না। এতে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষের চরম এক দুঃসময়ে জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
৬ আগস্ট, শনিবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে এই দাবি জানায় সংগঠনটি।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছিলেন। তখন দাম নির্ধারণ করা হয় ৮০ টাকা লিটার। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর বাস ভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ, লঞ্চ ভাড়া বাড়ানো হয় ৩৫ শতাংশ যা তেলের দাম বাড়ানো হারের চেয়ে অনেক বেশি।
প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দ্রব্যমূল্য ঊধ্বগতিতে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষের চরম এক দুঃসময়ে জ্বালানি তেলের দাম একলাফে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছির বাড়ানোর ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাবে। ইত্যিমধ্যে পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বেকারত্ব সমস্যা আরো প্রকট হবে। আমাদের দেশে সাধারণত তেলের দাম যে পরিমাণ বাড়ে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাড়ে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহন ভাড়াও ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দেয় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকেরা। বাসের ক্ষেত্রে সরকার বাসের মালিক-শ্রমিক নেতারা মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে বাসের ভাড়া যে পরিমাণ বাড়ায় বাসে বাসে তার কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করে। সরকার বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দিলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী বাসে আদায় হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা বা বর্ধিত ভাড়া আদায় বন্ধে তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ালেও বর্তমানে তেলের বাজার নি¤œমুখী। এই সময়ে বাজার পর্যবেক্ষণ না করে, কেবল আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। অনতিবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে, পূর্বের মূল্য বহাল রাখার দাবি জানায় সংগঠনটি।
চট্টগ্রাম গ্রাহক কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে জ্বালানি তেল ও পানির বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে আজ শনিবার বেলা ১১ টায় এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বাস টার্মিনাল হয়ে বহদ্দারহাট চত্বরে এসে শেষ হয়, মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন গ্রাহক কল্যাণ পরিষদের সভাপতি এস এম নুরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সহ নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, দেশের মানুষ অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে। এরই মধ্যে সরকার অন্যায়ভাবে ওয়াসা পানির বিল ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি কওে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন, মানুষের দৈনন্দিন আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন, তার মধ্যে তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবহন খরচ, মালামাল বহনের উপর মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যার প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরই পরবে। দেশের মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে তেলের মূল্য বৃদ্ধিও বিষয়ে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেওে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি কারণে মানুষের জীবনযাপনের উপর প্রভাব পড়বে, খাদ্য দ্রব্য সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপর মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যা সাধারণ মানুষ ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে চট্টগ্রাম নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ মানুষের জীবন যাত্রাকে কঠিন করে তুলবে বলে মন্তব্য করেছে। সংগঠনের কেন্দ্রিয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. এনামুল হক লিটন, সাধারণ সম্পাদক সাহেনা আক্তার ও দপ্তর সম্পাদক মো. মাসুদ রানা প্রদত্ত এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এমনিতেই দেশের মানুষের একটি অংশ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে। এতদিন নিত্যপণ্যের দাম ছিল কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও হঠাৎ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আর্থিক চাপ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন তুলবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা পরিবহন ভাড়া ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি করবে। এটা নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা সরকারের নেই। এতে করে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। বাড়বে সব ধরনের উৎপাদন ব্যয়ও। একদিকে অভাব-অনটন অন্যদিকে দফায়-দফায় বাড়িভাড়া, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে গরিব ও নি¤œবিত্ত মানুষের জীবনে কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিবে।
গতকাল শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। এবং রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর করা হয়।
Discussion about this post