চট্টগ্রাম, ১০ নভেম্বর, ২০২২
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গুপ্তধনের লোভেই ঘুমন্ত অবস্থায় রাতের আঁধারে নদীতে ফেলে ৬ মাস বয়সী শিশু আনাছকে হত্যা করেছে আপন খালা। নিহত শিশু আনাছের খালা আঁখি রহমানের (১৮) বিরুদ্ধে এ ঘটনায় ১০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার সকালে আঁখি রহমানকে আসামি করে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আনাছের পিতা মো. হোসাইন আলী। পরে সেই মামলায় আঁখি রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আঁখি রহমান উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের ছৈনারমার ঘোনা এলাকার ছৈয়দ আকবরের মেয়ে। এর আগে বুধবার (৯ নভেম্বর) ভোরে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি স্টেশনের মাতামুহুরী নদী পয়েন্ট থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় শিশু আনাছের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা গেছে, গত ৫ নভেম্বর সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নে বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসেন আঁখি রহমান। পরে বোনের শ্বশুরবাড়ির একটি রুমে জিন থাকার অজুহাতে ঝাড়ফুঁক শুরু করেন। অল্প বয়সে এসব কাজ করতে বারণ করেন বড় বোন সাকিলা ও দুলাভাই মো. হোসাইন আলী। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আঁখি। সেই ক্ষোভ থেকেই বুধবার (৯ নভেম্বর) ভোরে ঘুমন্ত শিশু আনাছকে মুখে কাপড় চাপা দিয়ে মাতামুহুরী নদীতে ফেলে দেয় তার খালা আঁখি রহমান। এর আগে মঙ্গলবার রাতে কান্নার পর শিশু আনাছকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন তার মা সাকিলা। এরপর এক রুমে হোসাইন আলী এবং অন্য রুমে শিশু আনাছ, মেয়ে মরিয়ম জন্নাত (৪), বোন আঁখি রহমান ও ননদ খতিজা বেগমসহ ঘুমিয়ে পড়েন সাকিলা। কিন্তু সকালে সাকিলার ঘুম ভাঙলে তার পাশে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন।
নিহত শিশুর পিতা মো. হোসাইন আলী বলেন, ‘বুধবার ভোরে ফজরের নামাজের পর মসজিদের কয়েকজন মুসল্লি কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি স্টেশন সংলগ্ন মাতামুহুরী নদী পয়েন্টে আমার শিশুপুত্র আনাছের মরদেহ ভাসতে দেখতে পায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তার মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার আনাছকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।’
অভিযুক্ত আঁখি রহমানের বরাত দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আঁখি ঝাড়ফুঁক করেন। তার জিন তাকে স্বপ্নে দেখায় যে একজন পছন্দের শিশুর জান কবচ করতে পারলে গুপ্তধন পাওয়া যাবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি ৫ নভেম্বর তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং সুযোগ বুঝে হত্যার জন্য মঙ্গলবার রাতে আপন ভাগিনাকে বেছে নেয়।
সূত্র আরও জানায়, আঁখি কৌশলে সবাইকে নিয়ে নানা গল্প-গুজব করে মঙ্গলবার রাতে দেরি করে রাতের খাবার খায়, যাতে ভোর রাতে সবাই গভীর ঘুমে থাকেন। পরে বুধবার ভোররাতে গুপ্তধনের লোভে আপন ভাগ্নেকে নদীতে ফেলে হত্যা করে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, শিশু আনাছ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে নিহত শিশুর মা, বাবা, খালা ও ফুফুকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশুটির খালা আঁখি রহমান হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। ছবি: সংগ্রহ (আসল ছবি নয়)
Discussion about this post