চট্টগ্রাম, ১২ নভেম্বর, ২০২২:
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যেও দাম বেড়েছে। কোথাও কোথাও খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কাও করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, করোনাকালে দেশে খাদ্যের অভাবে কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি। আর দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না।
তিনি জানান, ভোক্তাদের স্বস্তি দিতেই আমরা ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু করেছি। এছাড়াও আউশ ধান বাজারে আসতে শুরু করায় দামও কমতে শুরু করেছে সব রকমের চালের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের গুদামগুলোতে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে, যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন। যার মধ্যে চাল ১ লাখ ৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন এবং গম ৫৭ হাজার ৭০৩ মেট্রিক টন।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন খাদ্য গুদামগুলোতে ২০২১-২২ (২০২১ এর ১ জুলাই থেকে ২০২২ এর জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত) অর্থ বছরে চাল সংগ্রহ করা হয় মাত্র ৫ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন কিন্তু কোন গম সংগ্রহ করা হয়নি। বিতরণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং গম বিতরণ করা হয় ৬ হাজার ৩১৭ মেট্রিক টন। সে সময়ে চাল মজুদ ছিল ৭৬ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন এবং গম ৬০ হাজার ৪২৪ মেট্রিক টন।
চলতি অর্থ বছরের (২০২২-২৩) অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত চাল সংগ্রহ করা হয় ৪ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন তবে গম সংগ্রহ হয়নি। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ২৩ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন গম। পাশাপাশি বর্তমানে মজুদ আছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চাল এবং ৫৭ হাজার ৭০৩ মেট্রিক টন গম।
এছাড়াও দেশের চাল ও গমের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ১ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য খালাস শেষ পর্যায়ে। ছয়টি জাহাজের মধ্যে দুইটি জাহাজে গম রয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। খালাস অবশিষ্ট রয়েছে ২৩ হাজার ৫২০ দশমিক শূন্য ৪৪। খালাস করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন। অপর চারটি জাহাজে আতপ ও সিদ্ধ চাল আমদানি করা হয় ৭৯ হাজার মেট্রিক টন। খালাস অবশিষ্ট রয়েছে ২ হাজার ২৪ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। খালাস করা হয়েছে সাড়ে ৭৭ হাজার মেট্রিক টনের মতো চাল।
চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি করা বেশির ভাগ চাল ও গম খালাস শেষ করেছে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ। চাল বোঝাই চারটি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর ভিয়েতনাম থেকে ‘এমভি থাং লং’ নামে একটি জাহাজ ৮ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর ৪ নভেম্বর থেকে জাহাজটি থেকে চাল খালাস শুরু হয়।
একইভাবে দুইটি জাহাজে গম আমদানি করা হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ‘এমভি সুলাক-২’ থেকে ৫২ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন গম খালাস শেষ হয়েছে। অপর জাহাজ ‘এমভি লিলা’ জাহাজে করে গম আমদানি করা হয় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। খালাস অবশিষ্ট রয়েছে ২৩ হাজার ৫২০ দশমিক শূন্য ৪৪ মেট্রিক টন। খালাস করা হয়েছে ৩১ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট ও হালিশহর সিএসডিতে (সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো) আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রামে চালের উৎপাদন না হলেও উত্তরবঙ্গ থেকে চট্টগ্রামে সিএসডিগুলোতে আনা হয়। গম বিদেশ থেকে আমদানি করি। শুধু চট্টগ্রামে নয়, আশেপাশের জেলাগুলোতে আমরা চাল ও গম সরবরাহ করতে পারি। এক কথায় বলতে গেলে আগামী একবছর পর্যন্ত চট্টগ্রামে চাল ও গমের ঘাটতি হবে না। ছবি: সংগ্রহ
Discussion about this post