চট্টগ্রাম, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২:
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণ সমাবেশ। বিএনপি রাজধানীর নয়া পল্টনে এই সমাবেশ করতে চায়। এটা তারা আগে থেকে বলেও আসছে। কিন্তুৃ আওয়ামী লীগ সরকার চায় তাওেদর গণ সমাবেশ হবে সোহরাওয়াদী উদ্যানে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হবে? কারণ কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়।
আওয়ামী লীগ বলছে , বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করলে জনভোগান্তি সৃষ্টি হবে। যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকার বলছে – নয়া পল্টনের পরিবর্তে সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে।
এই পালাপাল্টির মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারও বলেছেন, ঢাকায় বিএনপির নির্বিঘœ সমাবেশের সুবিধার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা এবং সেখানে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ এগিয়ে আনা সত্ত্বেও তারা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, বাড়াবাড়ি করা হয়, তাহলে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ তারিখের পরিবর্তে এগিয়ে এনে ৬ তারিখ করেছেন। যাতে সেই মঞ্চ, প্যান্ডেল গুটিয়ে ফেলার পর বিএনপি সময় নিয়ে মঞ্চ এবং তাদের প্যান্ডেল নির্মাণ করতে পারে। কোনো সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়া সহজ কিন্তু এগিয়ে আনা সহজ নয়। তারপরও বিএনপির জন্য আওয়ামী লীগ সেটি করেছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি তো নির্বিঘেœ সারাদেশে সমাবেশ করছে।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী মাঠে সমাবেশ করার জন্য ২৬ টি শর্ত দিয়ে চিঠি দিয়েছে ডিএমপি। যেখানে বলা হয়েছে নয়পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করলে যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে বিধায় অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের জন্য আগামী ১০ ডিসেম্বর (শনিবার) বেলা ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সময় উল্লেখ করা হয়েছে। সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমাবেশস্থলে আসতে পারবে। আর সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। উদ্যানের বাইরে কোথাও লোকসমাগম করা যাবে না। এমনকি উদ্যানের বাইরে মাইক, লাউডস্পিকার কিংবা প্রজেক্টরও স্থাপন করা যাবে না।
মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না। পতাকা, ব্যানার বা ফেস্টুন ব্যবহারের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠি সোঁটা বা রড আনা যাবে না।
আয়োজকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং ভেহিকল স্ক্যানার ও সার্চ মিরর বসিয়ে যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা করতে বলা হয় ডিএমপির চিঠিতে।
আয়োজকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভালো রেজুলেশনের সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দিয়েছে ডিএমপি।
এ ছাড়া এসব শর্ত ভঙ্গ করা হলে তাৎক্ষণিক অনুমতির আদেশ বাতিল হবে। তাছাড়া কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অনুমতি বাতিলের ক্ষমতা থাকবে ডিএমপির হাতে।
ডিএমপি চিঠিতে এটাও বলা হয়, এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে বিএনপিকে।
এর আগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ করতে ডিএমপিতে বরাবর গত ২০ নভেম্বর আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি নয়াপল্টনের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।
সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি দেওয়াকে দূরভিসন্ধি বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করব। এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। নয়াপল্টন ঘিরেই আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাইনি। সেখানেই সরকার কেন অনুমতি দিল? তাদের উদ্দেশ্য কী?’
তবে বিএনপির দুই একজন নেতা সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার পক্ষে বলে সংবাদ মাধ্যম জানায়। তবে অধিকাংশ নেতা নয়াপল্টনের একটি ভেন্যুই চেয়েছে, এটি দলের সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে।
সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার সরকারি নির্দেশনাকে তারা সরকারের অজানা ‘ভয়’ বা ‘আতঙ্ক’ থেকে বলে মনে করেন। এর পেছনে একটা রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিও রয়েছে। বিএনপিকে দেওয়ালবেষ্টিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আবদ্ধ রেখে নিজেদের নিরাপদ রাখা, একই সঙ্গে নয়াপল্টন এলাকায় বড় গণজমায়েতের যে রাজনৈতিক প্রভাব, সেখান থেকে বঞ্চিত করার কৌশল রয়েছে আওয়ামী লীগের।
বিএনপির সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসাবে ঢাকায় এই সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যা গত ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে শুরু করা হয়। এরমধ্যে তারা ৮ টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে।
তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি যদি জনগণের জীবনযাত্রার ব্যত্যয় সৃষ্টি করে, ঢাকা শহরে ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
একইসাথে তিনি বলেন, আমরা জানি ঢাকা শহরে অগ্নিসন্ত্রাসীরা লুকিয়ে আছে, ঘাপটি মেরে বসে আছে। সভা উপলক্ষে তারা ধীরে ধীরে আবার বের হওয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপির যে সমস্ত নেতা বড় গলায় কথা বলছেন, তারা এই অগ্নিসন্ত্রাসের অর্থদাতা, মদদদাতা, হুকুমদাতা। প্রয়োজনে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
সরকার কাউকে জনজীবনের নিরাপত্তা বিঘিœত করার এবং গ-গোল করার সুযোগ দিতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্যেই সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু বিএনপি একটি হীন ও অসৎ উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে সভা করতে চায়। নয়াপল্টনের সামনে কোনো মাঠ নেই, সেটি ঢাকা শহরের ব্যস্ততম বড় রাস্তা। সেই রাস্তা বন্ধ করে জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে কেন তারা সেখানে সভা করতে চায়! তাদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়ার কথা প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, এরপরও মির্জা ফখরুল সাহেব অসৎ উদ্দেশ্যে এই সমস্ত কথাবার্তা বলছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোন বদ মতলবে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী সমাবেশ করতে চায় না। যেখানে পাক হানাদার বাহিনী আত্ম সমর্পণ করেছিল। সেখানে কী অনুবিধা তাদের। যদি সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তথ্য সহায়তা: দৈনিক সমকাল ও দৈনিক যুগান্তর।
Discussion about this post