চট্টগ্রাম, ২৪ জানুয়ারি,২০২৩:
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দুই সদস্যের বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।আসামিরা হলেন-জঙ্গি সংগঠনটির শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রণবীর ওরফে মাসুদ এবং তার সহযোগী ‘বোমা বিশেষজ্ঞ’ আবুল বাশার ওরফে আলম। সোমবার ভোর থেকে কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে র্যাবের গোলাগুলির পর ওই দুইজনকে গ্রেপ্তার এবং তাদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব। পরে গ্রেপ্তার জঙ্গি সংগঠনের দুই সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় হস্তান্তর করে র্যাব।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি টান্টু সাহা জানান, মঙ্গলবার সকালে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের এক সদস্য বাদি হয়ে দুই জঙ্গি সদস্যের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও পাঁচজনকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধি আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি নথিভুক্ত করার পর আসামিদের বান্দরবান আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অভিযানস্থল উখিয়া উপজেলার কুতুপালং হলেও অস্ত্র উদ্ধার এবং জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা থেকে। তাই মামলাটি নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় দায়ের করা হয়েছে।
কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পাহাড়ে-সমতলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল জঙ্গিরা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সোমবার ভোরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, একটি খালি কার্টিজ, দুটি একনলা (দেশি) বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, ১০০ রাউন্ড পয়েন্ট টুটু (২২) বোরের গুলি, নগদ ২ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
বেশ কয়েকজন তরুণের ঘর ছাড়ার তদন্তে নেমে ২০২২ সালের অক্টোবরে র্যাব নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার কথা জানায়। তখনই র্যাব জানায়, পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলে দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছে জামাতুল আনসার। এরপরে পাহাড়ে ধারাবাহিক অভিযানের খবর জানিয়ে আসছে এলিট ফোর্স র্যাব। র্যাব বলছে, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। পরে ২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।
অভিযান সম্পর্কে র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যে তারা নিশ্চিত হন যে, রনবীর ও বাশার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে কুতুপালং সাত নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লক ঘিরে সোমবার ভোর ৫টায় যৌথ অভিযান শুরু করে র্যাব।
র্যাবের অবস্থান বুঝতে পেরে জঙ্গিরা পাশের পাহাড়ে চলে যায়। র্যাব ওখানে অভিযান শুরু করলে সশস্ত্র জঙ্গিরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আত্মরক্ষায় র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে দুই জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয় র্যাব।
প্রশিক্ষণের ভিডিও উদ্ধার: নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র্যাব। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সেই ভিডিও সাংবাদিকদের সামনে প্রদর্শনও করা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে র্যাব আরও বিস্তারিত জানিয়েছে।
র্যাব বলছে, সোমবার ভোরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের পাশের জঙ্গল থেকে রনবীর ও বাশারকে গ্রেপ্তার করা হয়। রনবীর থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। সেই মুঠোফোনেই পার্বত্য অঞ্চলে সংগঠনটির সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে যেসব দৃশ্য দেখা গেছে, তা ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
ভিডিওতে জঙ্গিদের কয়েকটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প দেখানো হয়েছে। এসব ক্যাম্প বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলে। এই ভিডিওতে ‘অভিনয়’ করেছেন সংগঠনটির সদস্যরা, যারা স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। ভিডিওর শুরুতেই জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদকে দেখা গেছে। ঠিক তার পেছনেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এক প্রশিক্ষককে দেখা গেছে।
বিভিন্ন ক্যাম্পে সামরিক কার্যক্রম বা প্রশিক্ষণের সার্বিক দায়িত্বে থাকা দুই সদস্যকে দেখা গেছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ভিডিওতে সাব্বির ওরফে কারসে এবং দিদার ওরফে চাম্পাইকে দেখা গেছে। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সামরিক কার্যক্রম বা প্রশিক্ষণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দুটি ভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুজনকে। আর পুরো সামরিক কার্যক্রম দেখভাল করতেন রনবীর। ভিডিওতে সালেহ ও আল-আমিন নামে আরও দুজনকে দেখা গেছে। কয়েক দিন আগে এই সালেহ বান্দরবানে শারক্বীয়ার দুই সদস্যের কবরের সন্ধান দিয়েছিলেন।
Discussion about this post