চট্টগ্রাম, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩:
চট্টগ্রামে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার পর পায়ে শিকল বেঁধে ইটভাটায় শ্রমিক হিসাবে পাচারকারী ৮ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। চট্টগ্রামের হাটহাজারির উদালিয়ার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে দুই ভিকটিম সহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, লোকজনকে অপহরণ করে উদালিয়ায় নামক এলাকায় মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় পায়ে শিকল বেঁধে মুক্তিপণ ও ইট ভাটায় জবরদস্তিমূলক শ্রম আদায় করত ভুক্তভোগীদের দিয়ে।
ভুক্তভোগীরা এক ব্যক্তি জানান, ভিকটিম চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর হালিশহর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবার সহ বসবাস করতেন এবং রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
গত ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছায়টায় ভিকটিম রিকশা নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও ভিকটিম ফিরে না আসায় ভিকটিমের বাবা এবং তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখোঁজি করেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোন সন্ধান না পেয়ে ভিকটিমের বাবা হালিশহর থানায় একটি হারানো জিডি করেন। পরদিন ২১ জানুয়ারি ভিকটিমের বাবার মোবাইলে জনৈক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে দেড় টাকা চাঁদা দাবি করে এবং চাঁদার টাকা না দিলে ভিকটিমকে মেরে ফেলার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। ভিকটিমের বাবা গরীব এবং চাঁদা দেয়ার মত সামর্থ না থাকায় ছেলের জীবন নিয়ে চিন্তিত হয়ে বিষয়টি র্যাব-৭, চট্টগ্রামকে অবহিত করে।
র্যাব অপহরণের বিষয়টি গুরুতে¦র সাথে নিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার এবং উক্ত অপহরণের সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল ২৬ জানুয়ারি, আনুমানিক ২ টায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানাধীন বারৈহাট এলাকার একটি ভাড়া ঘর হতে অপহৃত ভিকটিমসহ মোট ২ জন ভিকটিমকে পায়ে লোহার শিকল এবং হাত বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে এবং অপহরণকারী চক্রের ৮ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হল- হাটহাজারীর পশ্চিম ধলইয়ের মৃত মাস্টার জেবল হোসেনের ছেলে শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী @কালু চেয়ারম্যান(৬৮), নোয়াখালীর চরজব্বরের মো মনির আহমদের পুত্র মোঃ খোকন (৩২), নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরপানাউল্লাহ এলাকার আনার আহমদের পুত্র মোঃ আলা উদ্দিন (৩৭), নোয়াখালীর চরজব্বরের পশ্চিম চর জব্বরের নিজাম উদ্দিনের পুত্র মোঃ ইউসুফ(৩৬), নোয়াখালী সদরের গোড়াপুরের মো. মোস্তফার পুত্র শহিদুল্লাহ রাজু(৩৩), মোঃ নাজিম (৩৬), নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরভাগ্যার মৃত আবুল হাশেমের পুত্র মোঃ জহিরুল ইসলাম(৪৮), এবং নোয়াখালীর চরজব্বরের আবদুল মতিনের পুত্র মোঃ সেলিম(৫১)।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন এলাকা হতে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী লোকজনকে অপহরণ করে আটকে রাখত। পরবর্তীতে তাদের পায়ে শিকল বেঁধে মারধর করত এবং ভিকটিমদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ বিভিন্ন অংকের চাঁদা আদায় করত। ভিকটিমদের পরিবারের নিকট হতে মুক্তিপণ আদায় করার পরও ভিকটিমদের না ছেড়ে ব্লাংক স্ট্যাম্পে স¦াক্ষর নিত। পরবর্তীতে তাদের মধ্যযুগীয় কায়দায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ইটভাটায় দিনে জবরদস্তিমূলকভাবে কাজ করাত এবং রাতের বেলা পায়ে শেকল বেঁধে খুঁটির সাথে তালা মেরে রাখত।
তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে র্যাব জানায়।