চট্টগ্রাম, ৫ মার্চ, ২০২৩:
আসন্ন রমজানে সেহরি ও ইফতারি পণ্য সহ নিত্যপণ্যের সঙ্কট যেমন হবে না, তেমনি এসব পণ্য সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হওয়ায় নিত্যপণ্যের সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই বলে ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন।
যে কারণে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে রমজানের পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুদ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ভারতের ভোমরা ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক ছোলা এসেছে খাতুনগঞ্জে। প্রতি ট্রাকে ১৫ টন করে দিনে ৩৭৫ টনের মতো ছোলা আসছে।
দেশে ছোলার চাহিদা বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু রমজানে চাহিদা থাকে এক লাখ টন। এই চাহিদার বিপরীতে প্রায় দুই লাখ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া দেশে উৎপাদিত হয়েছে ৪ হাজার ৬০০ টন।রমজানে চাহিদার শীর্ষ থাকা চিনির সংকটও কেটে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই চিনিবাহী জাহাজ এসেছে পাঁচটি, যেখানে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনিই আছে দুই লাখ ৪১ হাজার টন। আর জানুয়ারিতেই চিনি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টনের।
রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খেজুরের সংকটও হবে না।পুরো বছর যেখানে খেজুরের চাহিদা এক লাখ টন; শুধু রমজানে সেই চাহিদা থাকে ৫০ হাজার টন। ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে খেজুর আমদানি করা হয় ১১ হাজার ৭৭৩ টন। ২০২১ সালে আমদানি করা হয়েছিল ১২ হাজার ১৫৩ টন। অর্থাৎ আমদানি কমেছে ৩ শতাংশ। আর শুধু জানুয়ারিতে আমদানি করা হয়েছে সাত হাজার ৭৭০ টন। ফলে শেষ সাত মাসে আমদানি হয়েছে সাড়ে ১৯ হাজার টন। এ ছাড়া গত অক্টোবরে চার হাজার ৮০০ টন, নভেম্বরে সাড়ে চার হাজার টন এবং ডিসেম্বরে পৌনে ১৩ হাজার টন খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। আর জানুয়ারিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার টন। ফলে সব খেজুর ঠিকঠাকমতো এলে উদ্বৃত্ত থাকবে।
একইভাবে গত ছয় মাসে প্রায় দুই লাখ টন মসুর ডাল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। আগের ছয় মাসের তুলনায় যা দ্বিগুণ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সারা দেশে মসুর ডালের চাহিদা বছরে ছয় লাখ টন। রমজান মাসে চাহিদা এক লাখ টন। কাস্টমস ও বন্দরের আমদানির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মসুর ডাল আমদানি হয়েলাখ ৯৯ হাজার টন। আর ২০২১ সালের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল এক লাখ ৯ হাজার টন। আমদানি বেড়েছে ৮২ শতাংশ। আর শুধু জানুয়ারিতেই এসেছে ৩৯ হাজার ৬০০ টন মসুর ডাল। সে হিসাবে সাত মাসে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে দুই লাখ ৩৯ হাজার টন। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসেই ঋণপত্র খোলা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার টনের।
এদিকে সরবরাহ বাড়ায় কোন কোন পণ্যের দাম কমছে বলি দাবি ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ের হিসাবে পণ্যের দাম সেভাবে না বাড়ার সম্ভাবনার কথা জানান তারা।
খাতুনগঞ্জে গতকাল শনিবার ভালোমানের ছোলা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকায়, যা আগে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে মোটামুটি ভালো ছোলা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭৫ টাকায়, যা আগে ৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
জেলা প্রশাসকের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেছিলেন, গত রমজানে আমরা ৬৬ টাকায় ছোলা বিক্রি করেছি। এবার সেটির দাম ৮০ থেকে ৮২ টাকা। গতবার প্রতি ডলার ৭৯ টাকা দরে ডলার আমদানি মূল্য পরিশোধ করেছি। এবারে পরিশোধ করতে হয়েছে ১০৫ টাকা দরে। ডলারের কারণে এবার ছোলাতে ২৫ শতাংশ দাম বাড়তি।খাতুনগঞ্জের আড়তদার তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের কর্ণধার সোলায়মান বাদশা বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়তে থাকায় প্রতিদিন রমজানের পণ্যের দাম কমছে। সামনে আরও দাম কমবে।
Discussion about this post