নাসার(The National Aeronautics and Space Administration) প্রধান বিজ্ঞানী জিম গ্রিন। যার নেতৃত্বে মহাকাশ ও বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে সফলভাবে বিভিন্ন মহাকাশ যান পাঠিয়ে নাসার কার্যক্রম সম্পর্কে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছেন। মহাকাশ গবেষণার নতুন নতুন তথ্য বিজ্ঞান মনস্ক মানুষের মধ্যে জানান দিয়েছেন। বিশেষ করে ২০১২ সালে কিউরিসিটি ল্যান্ডিংয়ের সময় তিনি গ্রহ বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক ছিলেন। লাল গ্রহ মঙ্গলে কিউরিসিটি পাঠানোর পর বিজ্ঞান জগতে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। এ সময় কিউরিসিটির কার্যক্রমের প্রায় খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হত। মূলত তার নেতৃত্বে জনসাধারণের সামনে মঙ্গলের রোভার সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা ও প্রচার করা হয়। এভাবে মার্কারিতে মেসেঞ্জার, প্লুটোতে নিউ হরাইজন, জুপিটারে পাঠানো জুনো প্রোব, সেরেসে ডাউন প্রেরণের মত গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। জিম গ্রিন বর্তমানে মঙ্গলের পৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ানো পারসিভিয়ারেন্স রোভারের পরিকল্পনা করেছেন। গত ১৫ বছর যাবত নাসার বৃহৎ গবেষণাগুলো তিনিই যথেষ্ট দায়িত্বের সাথে সামলেছেন। নাসার এই জনপ্রিয় বিজ্ঞানী ১৯৮০ সালে নাসায় যোগদান করেন। এরপর তিনি নাসায় নিরলসভাবে গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে গবেষণা কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করেছেন।
নাসার এই প্রধান বিজ্ঞানী জিম গ্রিন অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী বছরের প্রথম দিকে গ্রিন অবসরে যেতে পারেন। ৪০ বছর ধরে কাজ করা এই বিজ্ঞানীর অবসরের ঘোষণায় নাসার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ নাসায় বহু গবেষণা ও বহু মহাকাশ অভিযানের সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত নাসার ন্যাশনাল স্পেস সায়েন্স ডাটা সেন্টারের প্রধান ছিলেন। এটা নাসার সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান বিষয়ক ডাটা আর্কাইভ। এরপর ১৯৯২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি স্পেস সায়েন্স ডেটা অপারেশনস অফিসের প্রধান হন। একই সাথে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি তিনি গ্লোবাল জিওস্পেস সায়েন্স মিশন WIND এবং POLAR এর মিশন অপারেশনস এবং ডেটা অ্যানালাইসিসের ডেপুটি প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জার্নালে ১১০ টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ লিখেছেন যার মধ্যে রয়েছে পৃথিবী এবং বৃহস্পতির চুম্বকীয় ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিক এবং ডেটা সিস্টেম এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিভিন্ন দিকের উপর। ৫০ টিরও বেশি প্রযুক্তিগত নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। আগস্ট ২০০৬ থেকে এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত ড. গ্রিন নাসা সদর দপ্তরের গ্রহ বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক ছিলেন। এই সময়েই তিনি বিভিন্ন মহাকাশ অভিযানে সফলভাবে নেতৃত্ব দেন।
কর্মজীবন জুড়ে গ্রিন অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে অসামান্য ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের জন্য আর্থার এস ফ্লেমিং পুরস্কার লাভ করেন। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান তথ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৬ সালে জাপানের কোটানি পুরস্কারে( Kotani Prize) লাভ করেন। তিনি সম্প্রতি প্লুটো সিস্টেমের নিউ হরাইজনস ফ্লাইবাইয়ের জন্য নাসা ব্যতিক্রমী অর্জন পদকও পেয়েছেন। গ্রিন একজন আমেরিকান পদার্থবিদ । তিনি তার পিএইচডি করেছেন ১৯৭৯ সালে আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞানে এবং তখন থেকে নাসায় কাজ করেছেন।
Discussion about this post