চট্টগ্রাম, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩:
সীতাকুণ্ড থেকে উদ্ধার করা বানরটি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে আজ সোমবার নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে বানরটিকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বানরটিকে গত রবিবার যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন এটি প্রচুর ডিপ্রেশড ছিল। অনেকটা অচেতন, দুর্বল ছিল। তার হার্টবিট, ওজন, তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এটির ওজন ১২ কেজি। ১০২ ডিগ্রি ছিল তাপমাত্রা। তখন তাকে এন্টিবায়োটিক ও এন্টিহিস্টামিন দেওয়া হয়। স্যালাইনের ব্যবস্থা করা হয়। এতে এটির অবস্থা কিছুটা ভালো হয়। পরে এটি যারা এনেছিল তাদের দিয়ে দেওয়া হয়। আজকে আবার চেকআপের জন্য আনা হয়।
জানা যায়, প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে বানরটি সীতাকুণ্ড পৌরসদর, উপজেলা কার্যালয় ও হাসপাতাল এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। স্থানীয় মানুষজন ও দোকানীরা এটিকে খাবার দেয়ায় এটি ওই এলাকায় প্রতিদিন আসত। এর মধ্যে একদিন বানরটি বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে আহত হয়। এতে এটির দুই পায়ের গোড়ালি, পাজার পিছনে সহ কয়েক জায়গায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে।
গত শনিবার আহত বানরটি সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে চিকিৎসা নিতে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বানরের আগমন দেখে চিকিৎসক ও স্থানীয়দের মধ্যে বেশ সাড়া পড়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা বানরটির ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেন। এর পরের দিন রবিবার আবার হাসপাতালে আসে বানরটি। সেটিকে আবার চিকিৎসা সেবা দেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পত্রপত্রিকায় এই খবর জানজানি হলে স্ন্যাকস রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সদস্যরা বানরটিকে সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে সোমবার ধরে নিয়ে আসে সিভাসু হাসপাতালে। সেখানে শুরু হয় তার চিকিৎসা সেবা।
আজ বানরটি সিভাসু হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কৌতূহলি মানুষ এটিকে দেখাতে হাসপাতালে ভিড় করে।
সিভাসু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. প্রণব পাল বলেন, বানরটি গতকাল আরও দুর্বল ছিল। আজ খাবার খেয়ে একটু স্ট্রং মনে হচ্ছে। যা শুনেছি এটি ইলেট্রিক শক খেয়ে মাটিতে পড়েছে। এতে সে বেশি আঘাত পেয়েছে। কয়েক জায়গায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছে।
এটি সীতাকু- হাসপাতালে নিজে নিজে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, মানুষের পরে হচ্ছে এপ প্রজাতির বানর, তারপর আসছে এসব বানর। বানর অন্যান্য পশুপাখির চেয়ে বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে। স্বাভাবিকভাবে সে যেহেতু আঘাত পেয়েছে, সে আশেপাশে ছিল, হয়ত সে বুঝেছে, সে কারণে হাসপাতালে যেতে পারে। ওরা খুবই উন্নত চিন্তা চেতনার প্রাণি।
চিকিৎসকরা বলেন, যে আঘাত পেয়েছে সেটা গতকাল আরও খারাপ ছিল। খাওয়াদাওয়া ঠিক থাকলে, ঔষধ চালাতে পারলে কয়েক সপ্তাহ লাগবে সুস্থ হতে। এখন বানরটি কলা, আপেল সহ ফলফলাদি খাচ্ছে বলে জানান।
উদ্ধার টিমের সদস্যরা বলেন, সীতাকু-ে এটিকে খাবার দিত অনেকে। রোগীরাও খাবার দিত। যে কারণে বানরটি সেখানে আসত নিয়মিত। বন্যপ্রাণিকে খাবার না দিতে বলেছি। ওখানে পরিবেশটা বণ্যপ্রাণির জন্য ক্ষতিকর। যেমন বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে সেটি বেশ আঘাত পেয়েছে। তারা বলেন, হাসপাতাল এলাকায় ওটা খাবার পেত বলে ওখানে যেত। চিকিৎসার জন্য গেছে বলা হলেও সেটি আসলে নয়, ও খাবারের জন্যই যেত। ১০ দিন আগেও এটি সুস্থ ছিল।
সিভাসু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, গতকালের চিকিৎসায় বানরটি ভালো ইমপ্র্রুভড করেছে। তারা তার শারীরিক পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়েছে। সোমবার বানরটিকে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে বানরটিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় সেটি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠে।
চিকিৎসকরা বলেন, এটি বণ্য প্রাণি। এটিকে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন। যদি আক্রমণ করে বসে সেক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে যদি সঠিক চিকিৎসা দিতে পারি। ক্ষতস্থান শুকাতেও সময লাগবে। অন্তত একমাস লাগবে বলে জানান চিকিৎসকরা।