চট্টগ্রাম, ০৫ অক্টোবর, ২০২৩:
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তাদের আলাপ আলোচনায় রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।বর্তমানে যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে। ইতিমধ্যে রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার। যা ৩ হাজার ১৯০ কোটি ডলার ছিল গত বছরের জুনে।
রিজার্ভ কমায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্তও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তাদের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল গত জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, গত সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে ডলারে রাখা।এই শর্ত পূরণ করতে না পারার কথা স্মরণ করে দিয়েছে বাংলাদেশে আসা আইএমএফ’র প্রতিনিধি দল। যারা বাংলাদেশের রিজার্ভের পতন ঠেকানো সহ নানা বিষয়ে পর্যালোচনা করবেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। গতকাল ৪ অক্টোবর সকাল ৯টায় এএন হামিদুল্লাহ কনফারেন্স রুমে আইএমএফ-এর ফার্স্ট রিভিউ আন্ডার দ্য ইসিএফ/ইএফএফ/আরএসএফ অ্যান্ড আর্টিকেল ফোর কনসালটেশন মিশন টিমের সঙ্গে উদ্বোধনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টিম অংশগ্রহণ করে। এ সময় আইএমএফের সঙ্গে সম্মত অ্যাকশন আইটেমগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন থাকলেও দুটি বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে— নির্ধারিত রিজার্ভ সংরক্ষণ ও নির্ধারিত হারে ট্যাক্স রেভিনিউ অর্জন।
গতকালের সভায় আইএমএফ’র মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফ বুধবার অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠকে প্রয়োজনীয় স্তরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে এবং জুন ২০২৩ পর্যন্ত রাজস্ব তৈরিতে সরকারের ব্যর্থতার বিষয়ে অনুস্মারক দিয়েছে বলে জানা যায়।
বৈঠকে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন অর্থ সচিব মোঃ খায়রুজ্জামান মজুমদার। কর্মকর্তারা বলেছেন, আইএমএফ হাইলাইট করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক জুনের শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলারে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, যখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একই সময়ের মধ্যে ৩.৩৮ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব তৈরি করার শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আগামী দুই সপ্তাহে মিশন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বিশদ আলোচনা শেষে ১৯ অক্টোবর সমাপনী সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন,দেশে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের (আইবিএফবি) বার্ষিক সম্মেলনে ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে জাহিদ হোসেন আরও বলেন,দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি এখনো অ্যালার্মিং পর্যায়ে না গেলেও উদ্বেগের পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতিনিয়ত রিজার্ভ কমছে, কিন্তু সেভাবে প্রবাস আয়, বিনিয়োগ ও রপ্তানি আয় আসছে না।দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার পেছনে বৈশ্বিক কারণের সঙ্গে একাধিক দেশীয় কারণও আছে বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন কারণে গত দুই বছরে প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার করে রিজার্ভ কমেছে। ২০২২ সাল থেকে দেশে প্রবাস আয়ের প্রবাহও কমছে। ২০২২ সালে যেখানে মাসে ২০০ কোটি ডলার আসত, সেখানে ২০২৩ সালের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে দেশে প্রতি মাসে গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ কোটি ডলার প্রবাস আয় এসেছে। ছবি: সংগ্রহ
Discussion about this post