চট্টগ্রাম,১৫ অক্টোবর, ২০২৩:
চাকসুর সাবেক ভিপি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম নামে আর একটি নতুন রাজনৈতিক দল যুক্ত হতে যাচ্ছে দেশের রাজনীতিতে। আজ ১৫ অক্টোবর দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে রাজনীতিতে তাদের জড়িত হবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা তুলে ধরা হয়।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের প্রধান সংগঠক চাকসুর সাবেক ভিপি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও সদস্য সচিব চাকসুর সাবেক জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদ।
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ঢাকায় কনভেনশনের মাধ্যমে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হবে। মূলত নব্বই এর স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছাত্রঐক্যের নেতৃবৃন্দ এই সংগঠনের রূপকার। যারা বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের নামে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি তুলে ধরবে দেশের জনগণের কাছে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসা জরুরি। দেশ উন্নত হচ্ছে। উন্নয়নের ধারায় দেশের নাগরিকদের যুক্ত করতে হবে।
সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে লিখিত বক্তব্যে আজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে কোনো সাংঘর্ষিক রাজনীতি আমরা চাই না। এর ফলে ভাঙ্গচুর, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যা, হরতাল অবরোধ রাজনীতির কোনো ভাষা হতে পারে না।
আর আমাদের দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে সেটা আমাদের জনগণই ঠিক করতে পারে, বিদেশিরা নয়।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেন, বতর্মান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে এই উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য ফেরদৌস বশির, সোহেল রহমান, কাজী সিরাজুল ইসলাম।চরম এক অনিশ্চতায় দেশের জনগণ।
বেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জাতি দু’ভাবে বিভক্ত কেউ পরিস্কার জানে না কি হতে চলছে নির্বাচন হবে কি না? বিরোধীদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না? দেশের অর্থনীতি সচল থাকবে কি না? মেগা প্রজেক্টগুলো অব্যাহত থাকবে কি না? দুর্নীতির
বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হবে কি না? নানা প্রশ্ন জনগণের মনে উঁকি দিচ্ছে।
এদিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দেশি বিদেশি নানা গ্রুপ/গোষ্ঠী তৎপর। নানা এজেন্ডা নিয়ে প্রত্যেকেই যেন
ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর।
পশ্চিমা বিশ্ব- আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ভারত, চীন সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহ আমাদের উপর চাপ তৈরি করছে-
স্যাংসনের ভয় দেখিয়ে কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির করে দিয়ে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, স্বাধীন রাষ্ট্র
হিসেবে আমাদের দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে, সেটা আমাদের দেশের জনগণই ঠিক করতে পারে, বিদেশিরা নয়।আমরা মনে করি, তাদের এসব কর্মকাণ্ডের
পেছনে রয়েছে তাদের স্বার্থ ও ভৌগোলিক আধিপত্য বিস্তারের নীলনকশা।
দেশে কোন সাংঘর্ষিক রাজনীতি আমরা চাই না, এর ফলে ভাংচুর, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যা, হরতাল অবরোধ
রাজনীতির কোন ভাষা হতে পারে না।
আমরা দেখেছি, অতীতেও সাংঘর্ষিক রাজনীতি দেশের কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। ইদানিং দেশে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ বেশ তৎপর। এর মাধ্যমে পাল্টাপল্টি প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, দেশেও বিদেশে বসে। লাগামহীন
মিথ্যাচারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি ও স্থিরিতা তৈরি করছে। ফলে জনগণ কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা
সেটা বুঝতে পারছে না। গত পনের বছরে দেশে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে এ কথা সত্য। কিন্তু উন্নয়নের
সাথে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও জনমনে আছে। তবে এসময়ে রাজনীতির ব্যাপক পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করছি।
এখন আর রাজনীতিতে ভালোলোকের স্থান নেই। ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নেই আগের
মত। জাতীয় সংসদের ৮০ ভাগ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা দ্বারা পরিবেষ্টিত। ফলে
প্রকৃত রাজনীতি নির্বাসনে গেছে। সুযোগসন্ধানিরা ক্ষমতা ও অর্থকে ব্রত হিসেবে নিয়েছে। দৃশ্যত জনতার রাজনীতি
প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে তা পরিষ্কার। ফলে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের উপর জনগণের আস্থা ও
সম্মানবোধ দিন দিন উঠে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এখনই এ বিষয়ে সতর্ক না হলে দেশ গভীর সংকটে নিপতিত হবে।
রাজনীতিতে ভাল লোকজনকে জায়গা করে দেয়া, সুস্থ রাজনীতির ধারা তৈরি করা সচেতন নাগরিক সমাজের দায়িত্ব ও
কর্তব্য। লক্ষ্যনীয়, জনগণের কল্যাণচিন্তা করা, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার
প্রতিনিধি দিন দিন কমে যাচ্ছে। রাজনীতিতে নেতা-কর্মী সৃষ্টি করার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন হয় না গত ৩০ থেকে ৩৫
বছর। যদি ছাত্রসংসদগুলোর নির্বাচন নিয়মিত হতো, তাহলে এখন রাজনীতিতে একটি গুণগত মান লক্ষ্য করা যেতো।
নীতি নৈতিকতা, আদর্শবাদিতা, মূল্যবোধেরও এতো অধঃপতন হতো না। এখন আমরা এও দেখছি, দেশে গণতন্ত্রকে
বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশে যেমন সুশাসন দরকার, তেমনি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাও দরকার। এর অনুপস্থিতে
উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় এবং একই সাথে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও থাকে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে একটি গণতান্ত্রিক ধারার উন্মেষ সময়ের দাবি। তাই আমরা সমমনা, দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের সহযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে একটি ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
Discussion about this post