চট্টগ্রাম,০৭ নভেম্বর, ২০২৩:
ফটিকছড়ি আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার পথে আজ দুপুরে হাটহাজারীতে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে বাস-সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের সাতজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী, তিনটি শিশু ও একজন পুরুষ রয়েছে। নিহতরা হলেন- চন্দনাইশ উপজেলার পূর্ব জোয়ারা মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা রীতা দাশ (৩৫), তার দুই মেয়ে শ্রাবন্তী দাশ (১৬) ও বর্ষা দাশ (৭), দুই যমজ ছেলে দিগ দাশ (৪) ও দিগন্ত দাশ (৪), রীতার ভাশুরের ছেলে বিপ্লব দাশ (২৫) এবং রীতার স্বামীর কাকাত বোন চিনু দাশ (৫০)।
নিহতরা সকলেই সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী। তারা সকলে সিএনজি অটোরিকশা যোগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুর এলাকায় একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন।
এ দুর্ঘটনায় অটোরিকশার চালক বিপ্লব মজুমদার (২৮) এবং নিহত চিনু দাশের ছেলে বাপ্পা দাশ (৩০) আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে মহাসড়কের উপজেলার ৩নং মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চারিয়া এলাকার বোর্ড স্কুল সংলগ্ন ইজতেমার মাঠের সমানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারীর চারিয়া এলাকায় বাস-সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করি। এরপর তাদের লাশ নাজিরহাট হাইওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের চারিয়া এলাকায় শহরগামী দ্রুতগতির পদক্ষেপ নামে যাত্রীবাহী একটি বাসের (চট্টমেট্রো-ব ১১-১৮০৮) সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আশা ফটিকছড়িগামী অপর একটি সিএনজি অটোরিকশাটি (চট্টগ্রাম-থ ১৩-০৮১৮) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি অটোরিকশাটি অনেক দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। সিএনজিতে আরোহীরা রাস্তার উপর আছড়ে পড়ে। এ সময় তিনজন নারী, তিনটি শিশু ও একজন পুরুষ সিএনজি আরোহী একই পরিবারের সাতজন ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।
ফটিকছড়িগামী সিএনজি অটোরিকশাটি অন্য একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে বাসের সামনে পড়ে। বাসটির গতিও বেশি থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজির সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানায় স্থানীয়রা।
আহতদের স্থানীয়রা দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার পরপর উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রশ্মি চাকমা।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত রিতার ভাসুর সুনীল দাস জানান, নিহত রিতা তার ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ফটিকছড়িতে তার বাপের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। গত এক মাস আগে তার ঠাকুর দিদি পরলোকগমন করেছিল। আজ (মঙ্গলবার) ছিল ওই ঠাকুর দিদির মাসিক শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। তাই, আজ সকালে তারা গ্রামের বাড়ি থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশার যোগে পটিয়ার মজ্জারটেক এলাকায় পৌঁছে। সেখান থেকে ফটিকছড়ির নানুপুর এলাকায় পর্যন্ত একটি সিএনজি অটোরিকশার করে ভাড়া করে। এরমধ্যে ওই অটোরিকশা যোগে হাটাজারীর গেলে তারা দুর্ঘটনায় পতিত হয়। তাদের নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আদিল মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। তারা একই পরিবারের সদস্য। চন্দনাইশ থেকে তারা সিএনজি অটোরিকশা যোগে ফটিকছড়ি উপজেলার দিকে যাচ্ছিলন।
তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহের সুরুত হাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন বলে জানান। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাতক বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে৷ দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে দুমড়ে মুছে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশা ও ঘাতক বাসটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হাটহাজারী মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান। এরপর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিহতদের মরদেহ মহাসড়ক থেকে উদ্ধার করার পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান।
Discussion about this post