চট্টগ্রাম,১৩ নভেম্বর, ২০২৩:
খাগড়াছড়ি পার্বত্যাঞ্চলের প্রথম রামগড় আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার,১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এর শুভ উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রজেক্ট-১ প্রকল্পের আওতায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এটি নির্মাণ করেছে।
রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. সারওয়ার আলম সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী ১৪ নভেম্বর ভার্চুয়ালি রামগড় স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের শুভ উদ্বোধন করবেন। ইতিমধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস থেকে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
রামগড় স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের দায়িত্বরত ইনচার্জ আবতাব উদ্দিন বলেন, ১৪ নভেম্বর উদ্বোধনের বিযয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।
কর্তৃপক্ষ জানান, ইতিমধ্যে স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে রামগড় মহামুনি এলাকায় ১.৯ মিটার দৈর্ঘের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে আন্তর্জাতিক মানের একটি সেতু নিমার্ণ করেছে ভারত।
১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নিমির্ত এ সেতুটি ২০২১ সালের ৯ মার্চ দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন এবং ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন ও চেক স্টেশনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কিছু লোকবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রামগড় স্থলবন্দরটি পুরোপুরি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য যেতে পারবে ভারতে। দেশটির সেভেন সিস্টার্স খ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে এই বন্দর দিয়েই। একইসঙ্গে রামগড় স্থলবন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, চিকিৎসাসহ পর্যটনে ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নতি সাধিত হবে।
রামগড় পৌর মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের কার্যক্রম উদ্বোধন হচ্ছে জেনে আমরা অত্র এলাকার জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে আশার আলো দেখছি।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতা আফরিন বলেন, অনেক প্রতীক্ষার পর রামগড় স্থলবন্দরের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য এই বন্দর খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির পথ সুগম হবে। এবং সর্বোপরি চিকিৎসা সেবা প্রার্থি ও পর্যটকদের জন্যও এ বন্দরের উদ্বোধন ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসাধারণসহ পুরো দেশ এই বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। পুরোদমে কাজ শেষ হলে দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং সার্বিক যোগাযোগ সুবিধা বাড়বে।
তথ্যমতে,শেওলা, রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানিযোগ্য পণ্যের জন্য ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং যানবাহনের পার্কিং সুবিধা সৃষ্টি করা, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মালামাল পরিবহন ও যাত্রী চলাচলের সুবিধার্থে ওয়ান স্টপ পোর্ট বিল্ডিং এবং আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ছিল এই প্রকল্পভুক্ত কাজ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে স্থলপথে আন্তঃবাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
সরকার দেশের চারটি স্থলবন্দরের উন্নয়নে ৯৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি নিয়েছিল। বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১: শেওলা, রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ছিল রামগড় প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ।
Discussion about this post