চট্টগ্রাম, ১১অক্টোবর, ২০২১:
বাংলাদেশের নাট্যশিল্পের অনতম সেরা প্রতিভা, একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা প্রফেসর ড. ইনামুল হক আজ সোমবার বিকাল ৩টায় মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গন ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে বিশাল শূন্যতা নেমে এসেছে। নাট্যাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী সদরের মটবী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন ড. ইনামুল হক।
তার পারিবারিক সূত্র জানায়, বরেণ্য এই অভিনেতা রাজধানীর বেইলি রোডের নিজ বাসায় দুপুরের খাবার খেয়ে ইজি চেয়ারে শুয়ে ছিলেন। তখন পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেননি তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল না। পরে তার অবস্থা অস্বাভাবিক দেখে তাকে দ্রু ত রাজধানীর ইসলামিয়া মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গন ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এবং নাট্যাঙ্গন ও চলচ্চিত্রের শিল্পী ও সহকর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন।
ইনামুল হকের পিতার নাম ওবায়দুল হক ও মায়ের নাম রাজিয়া খাতুন।
ড. ইনামুল হকের পুরো পরিবারই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তার দাম্পত্য সঙ্গী গুণী নাট্যজন লাকী ইনাম। তাদের সংসারে দুই মেয়ে হৃদি হক (স্বামী অভিনেতা লিটু আনাম) আর প্রৈতি হক (স্বামী অভিনেতা সাজু খাদেম)।সন্ধ্যায় শ্রদ্ধা জানাতে বরেণ্য অভিনেতা ও নাট্যকার ড. ইনামুল হকের মরদেহ নেয়া হয় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে। এ সময় প্রখ্যাত এ নাট্যজনকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন সতীর্থ ও নাট্যকর্মীরা। চোখের জল ও শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানান প্রিয় নাট্যজনকে।
ইনামুল হক ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে তিনি অনার্স ও এমএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে মানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি লাভ করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকার সময় ১৫ বছর রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং দুই বছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নটরডেম কলেজে পড়াশোনাকালীন তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন।ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তিনি ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসেই ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র যাত্রা শুরু হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এই দলের হয়ে প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ’। এরপর এই দলের হয়ে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’সহ আরও বহু নাটকে অভিনয় করেন।
১৯৯৫ সালে তিনি এই দল থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। এই দলের হয়ে তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন ‘জনতার রঙ্গশালা’,‘সরমা’সহ আরও বেশ কয়েকটি নাটকে। ২০০০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ইনামুল হক অভিনীত প্রথম টিভি নাটক মোস্তফা মনোয়ার পরিচালিত ‘মুখরা রমনী বরশীকরণ’। তার লেখা প্রথম নাটক ‘অনেকদিনের একদিন’ নির্মাণ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিটিভির প্রথম নাটক ‘বাংলা আমার’ এবং একুশের প্রথম নাটক ‘মালা একশত মালঞ্চের’ তারই লেখা ছিল।
Discussion about this post