চট্টগ্রাম,১৫ এপ্রিল, ২০২৫:
আজ বানৌজা সমুদ্র অভিযানে মিয়ানমারে পাচাররের শিকার ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে মিয়ানমার থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাদেরই একজন কক্সবাজারের উখিয়ার মোহাম্মদ আবুল হাশেম। হাশেম ছিলেন পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়া যাওয়ার ফাঁদে পড়ে। পরে তার জীবন নিয়ে নানা সংশয় তৈরি হয়। যেখানে বেঁচে ফেরার আশাও তার ছিল না। সে রকম একটা অবস্থা থেকে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় বানৌজা সমুদ্র অভিযানে আজ ১৫ এপ্রিল বিকালে চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর ইয়ার্ডে ফিরে আসে। নৌবাহিনীর এ জাহাজটি গত ৮ এপ্রিল ত্রাণ নিয়ে মিয়ানমার গিয়েছিল মিয়ানমারের ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রি নিয়ে। সেই জাহাজে ফিরেছেন হাশেম সহ বিশজন পাচারের শিকার কিশোর তরুণ। তারা দুই বছর মিয়ানমারের সংশোধনাগারে ছিলেন। যেহেতু তারা সকলে ধরা পড়ার সময় তখন আঠার বছরের নিচে বয়স ছিল।
দালালের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার পর আমাকে টেকনাফের একটা পাহাড়ে একদিন আটকে রাখে। এরপর মিয়ানমারে পাচার করে দেওয়া হয়। মিয়ানমারে মারধর করে এক লাখ টাকা নেওয়া হয়। মিয়ানমারে আট নয়দিন রাখার একটি বড় বোটে তুলে দেওয়া হয় মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে। সাগরে ছয়-সাত দিন কাটানোর পর মিয়ানমারের মিলিটারি বাহিনী আমাদের আটক করে। পরে জেল(নৌবাহিনী বলেছে -সংশোধনাগার) হয়।
জেলে যাওয়ার পর শুধুই চিন্তা ছিল মা-বাবা, পরিবারের কাছে ফিরে আসার। পরে নৌবাহিনী আমাদের নিয়ে আসে।
আজ নৌবাহিনীর জাহাজে চট্টগ্রামে আসার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে হাশেম সহ ২০ জনকে হস্তান্তর করা হয়।
নৌবাহিনী তাদের প্রেস রিলিজে জানিয়েছে,মায়ানমারে আটক থাকা ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’ জাহাজএর মাধ্যমে দেশে নিয়ে এসেছে নৌবাহিনী, তারা মানব পাচারের শিকার হয়ে প্রায় ২ বছর যাবৎ মায়ানমারে আটক ছিল। নৌবাহিনী জানায়, উন্নত রাষ্ট্রে প্রেরণ ও চাকরির প্রলোভনে পাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে তারা মায়ানমারে গমন করে।অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটককৃত আঠারো বছরের কম বয়সী তরুণদের কিশোর সংশোধনাগারে রাখা হয়। আটক হওয়ার পর থেকেই তাদের প্রত্যাবাসনে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা চলছে। এমতাবস্থায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মায়ানমারে পৌঁছালে আটককৃত নাগরিকদের প্রত্যাবাসন আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া মেলে। সেখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মায়ানমারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এপ্রেক্ষিতে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যকার আলোচনায় দুই দেশ সমঝোতায় উপনীত হয়। ফলে দীর্ঘ দিন আটক থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরা মুক্তি পায়।বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমার সরকারের পারস্পরিক সহযোগিতায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়।বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মুক্তিপ্রাপ্ত নাগরিকদের আজ নিরাপদে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।
Discussion about this post