চট্টগ্রাম,২১ জুলাই, ২০২৫:
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধ বিমান প্রশিক্ষণের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিক সহ মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের অন্তত বিশ জন নিহত হয়েছেন। দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ১৭০ এর কাছাকাছি।
ভয়াবহ এ ঘটনার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনবহুল এলাকায় কেন যুদ্ধ বিমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘনবসতি বা জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমানের মহড়া বা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন ।
শুধু বিএনপির রুহুল কবির রিজভী নয় জনমনে একই প্রশ্ন—নতুন বা প্রশিক্ষণরত পাইলটদের ফ্লাইট অনুশীলন কি জনবহুল অঞ্চলের আকাশে হওয়া উচিত? এ প্রশ্ন শুধু একটি দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নয়, বরং এটি একটি নীতিগত ও জীবন-মূল্যভিত্তিক প্রশ্ন, যা উত্তর দাবি করে।
অনেকে বলবেন, “পাইলট তো শিখবে ভুল করে করেই।” সত্য, কিন্তু এমন একটি পেশা যেখানে একটিমাত্র ভুলে শিখতে গিয়ে নিচের শত শত মানুষের জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে, সেখানে ভুল করার পরিসর থাকা উচিত শুধু এমন জায়গায়, যেখানে ভুল করলে কারও মৃত্যু না হয়।
বাংলাদেশের আইএসপিআর সংবাদ মাধ্যমকে বলেছে, বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় (বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে)। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল এবং কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এ আকস্মিক দুর্ঘটনায় বৈমানিকসহ ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪ জন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার (২১-৭-২০২৫) দুপুর ১ টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলাস্থ বিমানবাহিনীর এ কে খন্দকার ঘাটি থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় (এর বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে)। দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এবং বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এবং কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
কথা হচ্ছে- ঢাকা একটি জনবহুল এলাকা।রাষ্ট্রীয় প্রশিক্ষণ নীতির নৈতিকতার মানদণ্ডে আপনি কাকে ‘ঝুঁকির রেখার’ নিচে রেখে প্রশিক্ষণ চালাচ্ছেন? যদি এমন বিমান কোনো শ্রমিক কলোনির ওপর পড়ে, কিংবা জনাকীর্ণ বাজার এলাকায় পড়লে দুর্ঘটনার মাত্রা আরো কতটা ভয়াবহ হত?
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কী বলে?
উন্নত বিশ্ব—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও NATO–এর বিমানবাহিনীগুলো—পাইলট প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে জনবসতিমুক্ত, খোলা অঞ্চল বা মরুভূমিতে।
প্রশিক্ষণের জন্য তারা গড়ে তুলেছে Military Operating Areas (MOA), Low Flying Zones, কিংবা Desert Training Ranges, যেখানে জরুরি অবস্থায় বিমান ক্র্যাশ করলে নিচে মানুষের প্রাণহানি হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের Laughlin Air Force Base (Texas) কিংবা Vance AFB (Oklahoma)—দুটিই নির্জন এলাকায়।
ইতালির IFTS বা কানাডার NFTC প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রগুলোও বসতি থেকে অনেক দূরে।
অথচ আমাদের বিমানের প্রশিক্ষণ চলছে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী শহরে।
যুক্তরাষ্ট্রের Vance AFB (Oklahoma) – ফাঁকা কৃষি এলাকা। Columbus AFB (Mississippi) – ছোট শহরের বাইরে। NAS Whiting Field (Navy) – প্রশিক্ষণ মূলত উপকূলীয় ও গ্রামীণ অঞ্চলে।
MOA (Military Operating Areas): বিশাল আকাশসীমা বরাদ্দ থাকে যেখানে সাধারণ উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে।
NTC & Nellis Ranges (Nevada): যুদ্ধ-অনুকরণ ট্রেনিং সম্পূর্ণভাবে মরুভূমি ও জনশূন্য অঞ্চলে হয়।
যুক্তরাজ্যে RAF Valley (Wales) – দ্বীপাঞ্চলে, জনবসতি নেই বললেই চলে।
RAF Cranwell & Linton-on-Ouse – গ্রামাঞ্চলে, শহর থেকে দূরে।
RAF‑এর “Low flying areas” নির্দিষ্ট করে দেওয়া, যেখানে সাধারণ বিমান চলাচল নেই।
কানাডা (NATO Training in Canada – NFTC) ও CFB Moose Jaw ও Cold Lake: যা প্রেইরি ও বনাঞ্চল কেন্দ্রিক, জনবসতিহীন।
২০২০ সালে পাকিস্তানে একটি A320 বিমান করাচির মডেল কলোনির ওপর ভেঙে পড়ে—৯৭ জন নিহত হন।
ভারতেও প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পড়েছে।
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রশিক্ষণ FA-18 বিমান সান ডিয়েগোতে একটি বাড়ির ওপর পড়ে—৪ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিল।
এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে পাইলট, নিয়ন্ত্রণকক্ষ, ঘাঁটি—সবাইকে দায়ী করা হয়, এবং নীতিগত সংস্কার আনা হয়।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় কথা—জনবহুল এলাকার ওপর দিয়ে প্রশিক্ষণ নিষিদ্ধ করা। যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা। যেমন: নতুন নির্জন প্রশিক্ষণ আকাশসীমা নির্বাচন করা।
প্রশিক্ষণের ভৌগোলিক নীতি মানতে হবে।
জননিরাপত্তাকে পেছনে ফেলে প্রশিক্ষণের যুদ্ধ বিমান উড়াতে গেলে, সেই উড়ান ভবিষ্যতে এভাবে আরো বড় বিপর্যয় নিয়ে আসবে।
উন্নত দেশগুলো কি ব্যবস্থা নিয়েছে:
১. Geo-fencing & live tracking: প্রতিটি প্রশিক্ষণ বিমান ট্র্যাক হয়।
২. Simulated drills & VR Training: আসল ফ্লাইট কমিয়ে অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ অনুশীলন সিমুলেটরে।
৩. Fail-safe zones: বিমান ঝুঁকিপূর্ণ হলে কোথায় নামানো যাবে—এমন এলাকা আগেই নির্ধারিত থাকে।
৪. Civil Risk Analysis: প্রতিটি ঘাঁটির আশপাশে জনবসতি বাড়লে, প্রশিক্ষণ প্যাটার্ন পরিবর্তন করা হয়।
৫. Public risk reports: বছর শেষে কতগুলো প্রশিক্ষণ মিশনে ঝুঁকি ছিল, তার audit হয়।