চট্টগ্রাম, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩:
আওয়ামী লীগে দুই বহিরাগত এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাকর্মিদের ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েছে। এরমধ্যে সাতকানিয়া লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. আবু রেজা মু. নিজাম উদ্দিন নদভী নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ পেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মি তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে পটিয়ায় গত তিনবার আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়ে আসা সামশুল হক চৌধুরীর কপালে এবার নৌকা মার্কা জুটেনি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ঈগল মার্কা নিয়ে। তিন দফায় আওয়ামী লীগের এমপি হবার পর এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চনার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতাকর্মিও তার সঙ্গ ছেড়েছে। অন্যদিকে সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তার সাথেই আছেন লোহাগাড়া সাতকানিয়া দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতারা।
এমন কি প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের না পেয়ে নদভী বিএনপির নেতাকর্মিদের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুল কালাম আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা নদভীর পক্ষে জমির উদ্দিন প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চট্টগ্রাম-১৫ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছে বলে অভিযোগ করেছে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেব। এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেব গতকাল বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে মোতালেব উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা নদভী গতকাল বুধবার নগরীর টেরী বাজারের বিভিন্নস্থানে প্রচারণাকালে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেছে। এসময় তারা ব্যানার হাতে নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাইক্রোবাস ও একটি বাস নিয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় এসে প্রতিদিন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। প্রচারণাকালে তারা লোকজনকে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিচ্ছেন। প্রচারণায় অংশগ্রহণকারীরা হলেন ড. মহিউদ্দিন, প্রফেসর আফজল আহমদ, রেজিষ্টার আক্তারুজ্জামান কাইছার, ট্রেজারার প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর ইফতেখার উদ্দিন, ডাইরেক্টর ফয়সাল, খোরশেদ আলী ও নাছির উদ্দিন। অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এখন বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাড়ি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায়। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে সমস্যা কোথায় ? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে আইনগত কোন বাধা নাই। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেব প্রতিদিনই মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আ ম ম মিনহাজুর রহমান মোতালেবের সমর্থনে এক সভায় বলেছেন, আমাদের এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর চেহারা মলিন হয়ে গেছে। তিনি নির্বাচনের মাঠ থেকে পালিয়ে ঢাকায় ধর্ণা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, নদভীর গার্ডম্যান মামুন মিয়া হাতে অস্ত্র দিয়ে মানুষকে ভয় দেখাতেন। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া পর প্রত্যাহার হয়ে গেছেন। আমাদের এমপিকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। কোনো লাভ নেই, প্রধানমন্ত্রীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশিদের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, সব দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।
মিনহাজ নদভীর বিরুদ্ধে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভয় দেখানোর অভিযোগ করেন।
নৌকার নদভী ও ঈগলের মোতালেব ছাড়াও আসনটিতে মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ আলী হোসাইন, হাতঘড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মুহাম্মদ সোলাইমান কাসেমী, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ছালেম, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ হারুন এবং ছড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. জসিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনি প্রচারণার শুরুতে ঈগলের প্রার্থী মোতালেবের সমর্থক ও নৌকার প্রার্থী নদভীর সমর্থকদের সংঘাত-সংঘর্ষেও ঘটনাও ঘটে।
গত ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যানসহ তিনজন আহত হন। ওইদিন রাত আটটার দিকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের কর্মীরা সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ তিনজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ আসনে স্বতন্ত্র এম এ মোতালেব সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
Discussion about this post