চট্টগ্রাম, ৮ জানুয়ারি,২০২৪:
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে ৭ জন পুরুষ প্রার্থীকে হারিয়ে চট্টগ্রামে প্রথম মহিলা এমপি নির্বাচিত হলেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। যিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে। সনি একাদশ সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। অবশ্য এর আগে চট্টগ্রাম -১৩ আসন থেকে অলি আহমদের স্ত্রী মমতাজ বেগম উপ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া নির্বাচন করেছিলেন চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে। এছাড়া ১৯৮৮ সালে কামরুন নাহার জাফর চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম- ২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরই নয় ব্রিটিশ ভারতে সংসদীয় নির্বাচন শুরু হবার পর ভারত ও পাকিস্তান আমল পর্যন্ত সরাসরি নির্বাচনে সাধারণ সংসদীয় আসন থেকে চট্টগ্রামে তিনি তৃতীয় নারী সংসদ সদস্য বলে ইতিহাসবিদগণ জানিয়েছেন। ১৯৪৬ সালে কল্পনা দত্ত ও নেলি সেনগুপ্তা দুই নারী প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনে নেলী সেনগুপ্তা জয়ী হয়েছিলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সনির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ফটিকছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব (তরমুজ )। যিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেন। সনি তিনি ১লাখ ৩হাজার ৭০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আবু (তরমুজ ) পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫শত ৮৭ ভোট।
আবু তৈয়ব সহ খাদিজাতুল আনোয়ার সনির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৭ জন পুরুষ প্রার্থী। যাদের হারিয়ে তিনি সংসদ সদস্য হলেন। খাদিজাতুল আনোয়ার সনির অন্য ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন- বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারী (একতারা)। যিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ১শত ৩৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান (ঈগল)। যিনি পেয়েছেন ২ হাজার ২শত ৫৭ভোট। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ হামিদ উল্লাহ (মোমবাতি)। তিনি পেয়েছেন ১হাজার ৫শত ২৫ভোট। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মীর মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম (চেয়ার)। তিনি পেয়েছেন ৫শত ২৫ ভোট। জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শফিউল আজম চৌধুরী (লাঙ্গল)। তিনি পেয়েছেন ২শত ৫৫ ভোট। এবং অন্য আর এক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (ফুলকপি)। যিনি পেয়েছেন ৩শত ১৩ ভোট। গতকাল নির্বাচনে ফটিকছড়িতে ৩২ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান নির্বাচন কর্মকর্তারা।
গতকাল ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত ভোট কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে সনিকে বেসরকারিভাবে সাধারণ সংসদ সদস্য হিসাবে সনিকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম- ২ আসনে বর্তমান এমপি হচ্ছেন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিটিএফ থেকে ফুলের মালা প্রতীকে নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হলেও নির্বাচনের তিন দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে যান।
একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে চট্টগ্রামে খাদিজাতুল আনোয়ার সনির সাথে মহিলা এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক।
১৯৪০ ও ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ভোটে এমপি হয়েছিলেন ব্রিটিশ নারী নেলী সেনগুপ্তা(এডিথ এলেন গ্রে) বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ইতিহাসের তথ্যমতে, ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন নেলি সেনগুপ্তা। যিনি ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ পরপর পাঁচবার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী। নেলি সেনগুপ্তা ওরফে নেলিগ্রের সাথে যতীন্দ্র মোহনের লন্ডনে পরিচয় তাদের সম্পর্কে বন্ধুত্বে গড়ায়। পরে তারা বিয়ে করেন এবং দেশে ফিরে আসেন। সেই থেকে স্বামীর সাথে ভারতের রাজনীতি জড়িয়ে পড়েন নেলি সেনগুপ্তা।১৯৩৩ সালে নেলি কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার আগে দু’জন নারী, ১৯১৭ সালে অ্যানী বেশান্ত ও ১৯২৫ সালে সরোজিনী নাইডু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন।
Discussion about this post