চট্টগ্রাম,০৮ জানুয়ারি, ২০২৪:
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাসিক রেশন সহায়তা ৮ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। এর আগে রেশন ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলার করা হয়েছিল। চলতি জানুয়ারি থেকে ২ ডলার বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সোমবার ঘোষণা করেছে যে এটি উদ্বাস্তুদের জন্য মাসিক খাদ্য ব্যবস্থা জনপ্রতি ৮ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলারে (৮৭৭ থেকে ১০৯৭ টাকা) করছে, যা পূর্বে ১২ ডলার (১৩১৬ টাকা) থেকে দুবার কমানো হয়েছিল তহবিল ঘাটতির কারণে।
যদিও বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির মধ্যে ২ ডলার বৃদ্ধি পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়ছেন রোহিঙ্গারা।
কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা দিল মোহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশে আসার ছয় বছরেও আমি এক টুকরো মাংস খেতে পারিনি।
খাদ্য সহায়তা হ্রাসের পরে খাবারের অভাবের কারণে, আমি কাজ খুঁজতে এবং ক্যাম্পের বাইরে গিয়েছিলাম। আমার একটি পা ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং তখন থেকেই বিছানায় শুয়ে আছি।”
রোহিঙ্গাদের খাদ্য তালিকা বলতে – চাল, ডাল, তেল, রসুন, মশলা এবং আলু যা তাদের মাসিক খাদ্য ভাউচারের মাধ্যমে, রোহিঙ্গারা বিশ্ব খাদ্য সংস্থা- মনোনীত স্টোর থেকে ক্রয় করে।
রোহিঙ্গাদের অভিযোগ এসব খাদ্য প্রোটিন সমৃদ্ধ নয়।
বেগম নুর নাহার নামে এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, “আমি আমার শিশুকে দুধের পরিবর্তে চালের গুঁড়া খাওয়াই কারণ সেখানে কোনো শিশুদের নির্দিষ্ট পুষ্টিকর খাবার নেই।”
ডাব্লুএফপি বলেছে যে এটি পুষ্টির ব্যবধান মেটাতে সাহায্য করার জন্য মাল্টিভিটামিনযুক্ত “ফর্টিফাইড রাইস” চালু করবে।
কক্সবাজারের প্রধান শরণার্থী স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী আবু তোহা এমআর ভূঁইয়া বলেছেন, জেনেটিকালি পরিবর্তিত চাল রোহিঙ্গাদের অপুষ্টিজনিত রোগ যেমন ম্যারাসমাস (প্রোটিন-শক্তির অপুষ্টি) এবং নিকট্যালোপিয়া (রাত্রান্ধতা) মোকাবেলায় সহায়তা করবে।
ডব্লিউএফপি বলেছে যে দাতা দেশগুলোর অর্থায়নে ঘাটতির কারণে গত বছর মার্চ এবং জুনে দুই ধাপে খাদ্য সহায়তা কমিয়ে ১২ ডলার থেকে ৮ ডলার করা হয়। যেখানে এখনও প্রয়োজনীয় অর্থায়নে ৬১ মিলিয়ন ডলারের (6.7 বিলিয়ন টাকা) অভাব রয়েছে।
স্বতন্ত্র অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তী গাজা পরিস্থিতির দিকে সরে গেছে। রোহিঙ্গারা এখন বৈশ্বিক এজেন্ডায় নেই বঞ্চিত।
রোহিঙ্গা নাগরিক সমাজের নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, খাদ্যের অভাব নীরবে উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশের শিবির থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, যেখানে কর্তৃপক্ষ প্রায়ই রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের বিরোধিতা করছে। কিন্তু খাদ্যের অভাবে অনেক রোহিঙ্গা শিবিরের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করছে। জেলের হুমকি সত্ত্বেও কাজ খুঁজতে বের হয়, কেউ কেউ সহিংস দলে যোগ দেয়।
এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি কমে যাওয়ায় আরও অনেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অভিবাসনের জন্য বিপদজনক নৌকা পারি দিচ্ছে।
“রোহিঙ্গারা যদি শিবিরে পর্যাপ্ত রেশন পায়, তাহলে তাদের ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে,” জুবায়ের বলেন। নইলে সাগরে গন্তব্যহীন মৃত্যুর যাত্রা থামবে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আব্দুল মোমেন এই কথার সাথে একমত।
তিনি বলেন, এটা ইতিবাচক যে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা দুই ডলার বেড়েছে, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে এর আগে তা চার ডলার কমেছে।
“খাদ্য সহায়তা ১২ ডলার না নিলে , শিবিরে সহিংসতা বাড়তে থাকবে।” রেডিও ফ্রি এশিয়া’র নিউজ
Discussion about this post