চট্টগ্রাম,২৭ জুলাই, ২০২৪:
চলতি জুলাই মাস থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় কোটা আন্দোলন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নেয় ১৫ জুলাই থেকে। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হবার অভিযোগের পর থেকে আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করে। ১৮ ও ১৯ জুলাই সহিংসতা ব্যাপকভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ১৯ জুলাই কারফিউ জারির ঘোষণা দিয়ে সেনা মোতায়েন করে সরকার। আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেওয়ার পর থেকে গোলাগুলিতে ছাত্রসহ ২ শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
এই ঘটনায় সারাদেশে পুলিশসহ বাদি বাদি হয়ে সাড়ে ৫ শর বেশি মামলা হয়েছে। যেখানে আসামি ৬ হাজারের বেশি বলে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। আসামিদেও মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মিরাও আছেন। সরকার বলে আসছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদেও মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মিরা ঢুকে সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ জুলাই পর্যন্ত গত সাত দিনে সারা দেশে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১১৩টি। এরমধ্যে ঢাকাতেই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ৯০টি।পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ১ হাজার ১১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় ধরনের ছাত্র আন্দেগালন হয়েছিল। তাদেও অঅন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল কওে এক পরিপত্রের মাধ্যমে। কিন্তু ৫ জুন আদালতে এক রিটের কারণে উচ্চ আদালতের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরিয়ে আনা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন পোর্টাল তুলে ধরেছে তা হল-
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে ক্ষয়ক্ষতির একটি চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান জানান, বিটিভি ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের শতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। সেখানে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনে দুবার আগুন দেওয়া হয়। সেখানে ৫০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশন ভাঙচুর; দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ডিপোতে হামলা; শনির আখড়ায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন ও ভাঙচুর; বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে হামলা ও আগুন; ধানমন্ডির পিটিআইয়ের অফিসে হামলা; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসে হামলা-ভাঙচুর ও শতাধিক গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়ানো; মহাখালীর ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সাবমেরিন কেবল নষ্ট করা হয়েছে। মহাখালী করোনা হাসপাতাল, পুষ্টি ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিআরটিএ ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নরসিংদীতে কারাগারে হামলা করে সন্ত্রাসীদের বের করে নিয়ে গেছে। কয়েকজন ধরা পড়েছে, কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আফতাবনগর ওয়াসা শোধনাগারে হামলা; বাড্ডা, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেতে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ; রায়পুর পুলিশ কেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগ; রামপুরা থানা পুলিশে অগ্নিসংযোগ; মেরাদিয়া পিবিআই কার্যালয় ভাঙচুর; উত্তরায় রেললাইন উপড়ে ফেলা; মৌচাক পুলিশ বক্স; বসিলায় সিটি হাসপাতালে হামলা; কদমতলী মোহাম্মদপুর থানায় হামলা; বরিশালে র্যাবের কার্যালয়ে হামলা; গাড়ির ভেতরে র্যাব সদস্যকে হত্যা করা; পুলিশকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা; গাজীপুরে আওয়ামী লীগের… তাকে হাসপাতাল থেকে টেনে বের করে মেরে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়েছে।’
এসময় অনেক পুলিশও আহত হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফকিরাপুল পুলিশ বক্স ভাঙচুর; উত্তরা পুলিশের ডিসির কার্যালয় ও টিএসটির আঞ্চলিক অফিস; টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মধুপুর ও কালিহাতি উপজেলার দলের কার্যালয়; গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে আহত করা; জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও ১১টি মোটর সাইকেল পোড়ানো; গাইবান্ধায় রেললাইন উপড়ে ফেলা ও অগ্নি-সংযোগ; বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাট; জাসদ কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সাংস্কৃতিক জোটের কার্যালয়, পুলিশবক্স, সদর ভূমি অফিস, রেল স্টেশন, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সদর থানা, সিটি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকে ভাঙচুর; কোনাবাড়ি থানা এবং ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, কোনাবাড়ি পুলিশ থানা, বাসন থানার চৌরাস্তা পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও আগুন; গাছায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আগুন ২০টি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা; ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ। টঙ্গীতে ডেসকোর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ; বেক্সিমকো গার্মেন্টসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর; টঙ্গী পূর্ব থানায় হামলা; নারায়ণগঞ্জ জেলা হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগ; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অফিসে হামলা; নারায়ণগঞ্জে আগুন দিয়ে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদারীপুরে বাস পোড়ানো হয়েছে। সেখানে হামলা করা হয়েছে। কদমতলী ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর; শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, চিটাগাং রোডে সন্ত্রাসী হামলা; সিটি করপোরেশন ঢাকা উত্তরের মহাখালী ও মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের বর্জ্য পরিবহন গাড়িতে হামলা ও আগুন; মোহাম্মদপুর কার্যালয়ে মোটরসাইকেল ও ভবনের ব্যাপক ক্ষতি। কীটনাশক ওষুধ মশা মারার জন্য আমদানি করা হয়েছে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। রামপুরা পাম্প হাউজে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সবজায়গায় এই অবস্থা। মেট্রোরেলের স্টেশন পুড়িয়ে শেষ।’
Discussion about this post