চট্টগ্রাম, ৭ নভেম্বর, ২০২১ :
ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহন ‘ধর্মঘটের ডাক’ দিয়েছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। দুইদিনের মাথায় এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র আহ্বানে আজ দুপুরে বনানীর বিআরটিএ’র দপ্তরে বৈঠকে বসেন বাস মালিকদের নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সহ অন্যান্য নেতারা। বৈঠকে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সা, মহানগরে বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২ টাকা ১৫ পয়সা করার ঘোষণা আসে। অর্থাৎ বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, দুরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে এক টাকা ৮০ পয়সা নির্দারণ করা হয়েছে। মহানগরে বাসের ভাড়া এক টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে দুই টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজই প্রজ্ঞাপন হতে পারে।
এদিকে বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায় পবিরহন মালিক -শ্রমিকদের ধর্মঘট তুলে নিয়ে থেকে বাস চালানোর আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমি বাসের মালিকদের অনুরোধ করব, ধর্মঘট প্রত্যাহার করে যেন দেশ স্বাভাবিক অবস্থা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সরকার ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর শুক্রবার থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বাস চালানোর বন্ধ করে দেয়, এতে সারাদেশে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে।
এভাবে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে, পরিবহন মালিক সমিতির নেতা এনায়েত উল্লাহসহ অন্যরা বলে আসছিলেন, তারা কোনো কর্মসূচি দেননি। বাস মালিক-শ্রমিকরা নিজে থেকে ধর্মঘট করছে।
শনিবার চুয়াডাঙ্গায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, মালিক বা শ্রমিকেরা পরিবহন ধর্মঘট ডাকেনি। পরিবহন ধর্মঘট বলে আমি কিছু জানি না। পরিবহন ধর্মঘট কে ডেকেছেন, তা আমার জানা নেই। ধর্মঘট ডাকতে হলে একটা নোটিশ দিতে হয়। যারা ধর্মঘট ডাকবে তাদের একটা নোটিশ দিতে হয়।
পরিবহন ধর্মঘটের এই ভূতুড়ে ডাকে সারাদেশের মানুষ যাতায়াতে অবর্ননীয় ভোগান্তির শিকার হয়। যাত্রীরা গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শহর, নগর সর্বত্র রাস্তা, ঘাট, স্টেশনে দুর্বিসহ সময় পার করে। উপায়ন্তর না দেখে অনেকে ৫ থেকে দশ গুণ বেশি ভাড়া গুণে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে গত শুক্রবার সরকারি ও বেসরকারি চাকরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষাসহ মোট ২৬টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিবহন বন্ধ থাকায় সকালের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বহু পরীক্ষার্থী। যারা নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছেন তারা রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজিতে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছে। এদিকে বিকালে ৯টি চাকরির পরীক্ষা থাকলেও দেশের বিভিন্ন জেলার চাকরি প্রত্যাশীরা অংশ নিতে পারেননি। এতে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শুক্রবার মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় ও সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, কর কমিশনারের কার্যালয়, কর অঞ্চল-১৪, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, শ্রম আদালত সিলেট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য অধিদফতর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্র্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সমন্বিত সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তিনটি পদের ব্যবহারিক বাদে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাদ্য অধিদফতরে পরীক্ষা হবে দেশের আট বিভাগীয় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ)। শ্রম আদালত সিলেটের পরীক্ষা হয়েছে সিলেটে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়ার পরীক্ষা হবে বগুড়ায়। আর বাকি সব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ঢাকায় হয়।
দেশের এক অঞ্চলের ধর্মঘটের ডাকে পরিবহন বন্ধ থাকায় হাজার হাজার চাকরি প্রত্যাশি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
ধর্মঘটের তৃতীয় দিন রবিবার অফিস আদালত খোলা থাকায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠে।
গত বুধবার রাতে ডিজেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বা ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকালেই পণ্যবাহী গাড়ির মালিক-শ্রমিকরা ‘ধর্মঘটের’ ডাক দেয়। পরে জেলায় জেলায় বাস না চালানোর ঘোষণাও দেওয়া হয়। সর্বশেষ শনিবার লঞ্চ ধর্মঘটের ঘোষণাও আসে।
তবে ভাড়া বাড়ানোর কোনো সময়সীমা না দিয়ে কিংবা কারো সাথে আলাপ আলোচনা না করে গণ পরিবহনের মালিকরা হুট করে গণপরিবহণ বন্ধ করে দিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে -তা- দেশের জনগণকে জিম্মি করার সামিল বলে মন্তব্য করেছেন অনেক সচেতন যাত্রী। যাত্রীদের এই ভোগান্তির জন্য পরিবহণ মালিক শ্রমিক ও নেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে দেশের ইতিহাসে সব্বোর্চ ১৫ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা পরিবহন বন্ধ রেখে ও ভাড়া বাড়িয়ে জনগণের মধ্যে যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে সর্বত্র তার উত্তাপ কোথায় কিভাবে গ্রাস করবে মানুষকে তাতে বুঝে উঠতে পারছে না।
Discussion about this post