চট্টগ্রাম, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪:
ব্রাত্য রাইসু: আপনি রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন কি?
পণ্ডিত যশরাজ: এত বড় সৌভাগ্য হয়নি। আমাদের এখন যেরকম সিচুয়েশন!
রাইসু: পলিটিকাল সিচুয়েশন?
যশরাজ: নো, আমি শুধু মিউজিক পিকচারে বলব, পলিটিক্স আমার কিছুই নেই। আমি জানি না। অ্যান্ড আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ইন্টারফেয়ার।
রাইসু: কলাকারদের মধ্যে একটা পলিটিক্স আছে না?
যশরাজ: আছে, পলিটিক্স যাকে আমরা বলি সেটা শুধু কলার হিংসামি। ও বড়, আমি বড় হতে পারব না কেন! তার মধ্যেই যদি কেউ লেগ পুলিং করে, সেটা। অন্য ধরনে, আমি রেওয়াজ না করে নাম করব। উইদাউট প্র্যাকটিস। এটা হচ্ছে পলিটিক্স।
ঈমানদারি আছে, আল্লাহর নামে রেওয়াজ করছে—নাম তো হবে। ক্লাসিকেলে ঠিক আমার কনসেপশনটা মিলবে না। আমি কী বলছি, যে এখানকার ছেলেমেয়েদের ভারতে পাঠান শিক্ষা নিতে। তারা গভমেন্টের হেল্প চায়, ছোট না, দু’শ পাঁচশো টাকা না। ইদানিং টাকা ছাড়া কিছু হচ্ছে না। অফকোর্স আই অ্যাম নট চার্জিং এ সিঙ্গেল মানি।
রাইসু: আপনি মানি নেন না?
যশরাজ: না। একটা জিনিস হচ্ছে, বিদ্যা দানের জিনিস। বিদ্যা যদি আমি দেব, ওর বদলে ফিরৎ পয়সা কী রকম হতে পারে? যখন কাউকে কিছু দিয়ে দিলাম আই ক্যাননট চার্জ। বিদ্যা দান কি চিজ হ্যায়। বেচার জন্য না।
আমার কাছে ওপরঅলার কৃপায় যেসব স্টুডেন্ট আছে, শিখছে। আর আদমি আপনা তকদির কা খাতা হ্যায়। যদি আমি বলি আমিই আপনাকে খাওয়াই, গলদ বাত হ্যায়। হতে পারে যে আপনি আমার সঙ্গে আছেন বলেই আমার খানা মিলে। সামাঝ গায়া?
রাইসু: থোরা, আপকো হিন্দি থোরা সামাঝ গায়া।
যশরাজ: থোরা সমঝে ইয়েহি ঠিক হ্যায়। আপনি আপনার সরকারকে বলেন, যদি আমার ভারত সরকারের তরফ থেকে কিছু না হয় তা হলে আমি নিজে শিখানোর জন্য তৈরি আছি।
রাইসু: এখানে?
যশরাজ: যে কোনোটাই হতে পারে। আমার নামে দু’তিনটা স্কুল আছে। এক ত্রিবেন্দাম মে হ্যায়, এক নিউইয়র্ক মে হ্যায়, আর এক ভ্যাংকুভার মে—পণ্ডিত যশরাজ স্কুল অব মিউজিক। অ্যান্ড পণ্ডিত যশরাজ মিউজিক একাডেমি, নিউইয়র্ক। মেওয়াতি প্রতিষ্ঠান, ত্রিবেন্দাম। তিন মেরে কে স্কুল হায়। ম্যায় যাতা হু, পন্দর দিন বিশ দিন যাতা হু, শিখাতাহু, আর বহুত রিগ্রেস ট্রেনিং দেতা হু। এভরি ডে। আই অ্যাম নট চার্জিং। হাম পয়সাঅলা নেহি হু। এ জন্য স্কুল থেকে টিকিট পাঠিয়ে দেয়।
রাইসু: আপনার আপত্তি নাই কোনো?
যশরাজ: না, আপত্তি হবে কেন। লাইট মিউজিক আমি জানি না। উচ্চাঙ্গসঙ্গীত জানি। যদি ধরেন আমি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত করি তা হলে সেই শিখাব।
রাইসু: লাইট মিউজিক কীভাবে নেন আপনি?
যশরাজ: মিউজিক ইজ মিউজিক।
রাইসু: নো লাইট?
যশরাজ: নো লাইট অর নো ডার্ক, মিউজিক ইজ মিউজিক। দেক্খো, সংস্কৃত মে বোলতা হ্যায়… নারদজীর নাম শুনেছ? একটা ক্যারেক্টার আছে মানে মাইথোলজির, হিন্দু মাইথোলজির, একটা ক্যারেক্টার আছে—নারদ। সে হচ্ছে সঙ্গীতকার।
রাইসু: নারদমুনি?
যশরাজ: নারদমুনিজি! তো নারদমুনি ভগবান বিষ্ণুকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কোথায় থাকেন? বিষ্ণু ভগবান বললেন, “নাহং বসামি বৈকুণ্ঠে”—আমি জান্নাতে থাকি না। বৈকুণ্ঠ মিনস জান্নাত, প্যারাডাইস, স্বর্গ। আই অ্যাম নট লিভিং ইন দেয়ার। “নাহং বসামি”—আমি বাস করি না। “বসামি” মিনস বাস করি না। বৈকুণ্ঠে। না যেগিনাম সে হৃদয় ন চ। যারা যোগি আছে, আমার ধ্যানে বসে আছে, তাদের হৃদয়ের মধ্যেও নেই।
রাইসু: ও, তাতেও নাই!
যশরাজ: নাহ্। “নাহং বসামি বৈকুণ্ঠে, যোগীনাং হৃদয়ে ন চ।” হৃদয়কে তো আমরা “দিল” বলি, হ্যাঁ? ওখানে না। তবে কোথায়! “মৎ ভাক্তা”—আমার ভক্ত। “মৎ ভাক্তা ইয়াত্র”—যেখানে, গায়ন্তি—গান করছে। “তত্র তিষ্ঠামী নারদঃ”—আমি ওখানে আছি। যেখানে আমার ভক্ত আমার গুণগান করছে। হিন্দু মাইথোলজিতে মিউজিককে এত উচ্চস্থান দিয়েছে। লর্ড বিষ্ণু বলছেন যে, আমি যেখানে গান হচ্ছে সেখানে আছি!
—
সাক্ষাৎকার ১৯৯৬; পণ্ডিত যশরাজ (১৯৩০-২০২০); হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী, সঙ্গীত প্রশিক্ষক ও তবলাবাদক; জন্ম: ফতেহাবাদ, হরিয়ানা, ইন্ডিয়া