চট্টগ্রাম, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫:
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তি আদায়ে অফিসের চাপ সইতে না পেরে ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মী শুক্লা দে টিকলি (৩৮) আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আজ ৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্লা দে রুপসা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড নামীয় একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বোয়ালখালীর সাংবাদিক রাজু দে জানান, শুক্লা বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খরণদ্বীপ পাল পাড়ার সিদুল পালের স্ত্রী। তাদের সংসারে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, গত দু’মাস ধরেই ‘টার্গেট’ পূরণের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিলেন সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মচারীরা। কেটে নেওয়া হচ্ছিল বেতন। নানা অজুহাতে বিভিন্ন সময় অফিসে ডেকে নিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছিল। হেনস্তা সইতে না পেরে শেষমেশ আত্মহননের পথ বেছে নিলেন শুক্লা।
শুক্লার স্বামী জানান, সংস্থাটির কানুনগোপাড়া শাখায় ২০২৩ সালের মে মাস থেকে ফিল্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন শুক্লা। ওই সংস্থা এলাকায় মানুষজনকে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়। এসব ঋণ কিস্তি আকারে আদায় করতেন শুক্লা। এরমধ্যে গত ৫ আগস্টের পর এলাকার লোকজন কিস্তি পরিশোধ করছিলো না এবং কিস্তি আদায়ের জন্য গেলে শুক্লাকে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু সংস্থার কানুনগোপাড়া শাখার ম্যানেজার কাঞ্চন দেবনাথ কিস্তি আদায়ে শুক্লাকে চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন। এরপর সংস্থাটি শুক্লার মাসিক বেতন থেকে অনাদায়ী বিশাল অংকের কিস্তির টাকা কেটে নেওয়ার শর্তে বিষয়টি মীমাংসা করে।
সিদুল পাল অভিযোগ করে বলেন, গত নভেম্বর মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনের মধ্যে ৭হাজার টাকা দিলেও ৬ হাজার টাকা কেটে রাখে সংস্থাটি। এবং পটিয়ার ধলঘাট এলাকায় বদলী করে শুক্লাকে। এছাড়া অফিসে ডেকে নিয়ে হেনস্তা করে আসছিলো সংস্থার কর্মকর্তারা। এনিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে শুক্লা।
তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে শুক্লা জানিয়েছে সে নতুন কর্ম এলাকার পথঘাট কিছুই চেনে না। তার মনও সায় দিচ্ছে না নতুন এলাকায় যেতে। পরদিন শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে চাকরিতে যায়নি শুক্লা। সকাল ১১টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলেন। বিকেলে ঘরের রান্না ঘরে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে শুক্লা।
খবর পেয়ে গতকাল শনিবার রাতে থানা পুলিশ শুক্লার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে শুক্লার মরদেহ পাঠানো হয়েছে।
বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন, শুক্লার পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী মামলা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে,গত ১৯ অক্টোবর আমুচিয়া কানর দিঘীর পাড় এলাকার একটি কেন্দ্রে কিস্তির টাকা আদায় করতে গেলে কিস্তির অতিরিক্ত টাকা দিয়েছে অজুহাত তুলে দিনভর জিম্মি করে রেখে স্টাম্প নেয়। পরে মৃতের স্বামী ও শাখা ম্যানেজারকে খবর দিলে সেখান থেকে রাতে শুক্লাকে মুক্ত করে আনে। এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে আশ্রয় নিয়ে কোনো সুরাহা না পেয়ে পরবর্তীতে ২৪ নভেম্বর মৃত শুক্লা ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
