চট্টগ্রাম, ১০ জুলাই, ২০২৫:
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, বিজিবিতে বর্তমানে প্রায় ৫৭ হাজার সদস্য রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। উখিয়াতে একটি ব্যাটালিয়ন হয়েছে। আগামীতেও বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটালিয়ন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। জনবল সংকট মেটাতে আগামীতে ৫ হাজারেরও কম বা বেশি জনবল অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বর্তমান সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া আজকের নবীন-সৈনিকদের সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের আসন্ন নির্বাচনে তাদের কাজে লাগাতে পারবো।
তিনি ১০ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বায়তুল ইজ্জতের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০৩ তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
অপর প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত পুশব্যাক বা পুশইন হচ্ছে। মাঝেমাঝে হয়তো দু’একটা দিন বন্ধ থাকছে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে বিএসএফকে জানানোর পাশাপাশি আমাদের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় দূতাবাসের হাই কমিশনারকেও অবগত করা হয়েছে। পুশইন এর শিকার হয়ে যারা বাংলাদেশে আসছে তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশী। শুধু তাই না; কিছু ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গাদেরও জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শুরু থেকে আমরা এর কড়া প্রতিবাদ করে আসছি।
নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশ্য মহাপরিচালক বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তোমরা বিজিবি’র সুনাম ও সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। এছাড়া তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহিয়সী নারীদের অংশগ্রহণ, অবিস্মরণীয় অবদান ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন।
মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার ওপরই নির্ভর করবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব।
নবীন সৈনিকদের কোন অবস্থাতেই প্রতিপক্ষ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিকট পিঠ প্রদর্শন না করার আহ্বান জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, দেশমাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষায় নবীন সৈনিকরা জীবন দিবে, তবু্ও এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দিবে না। কখনো হতাশ ও নিরাশ করবে না দেশবাসীকে।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিক জীবনের অলংকার। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে পিছপা হয় না সেই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। বর্ডার গার্ড এর ৪ মূলনীতি-মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবির উপর অর্পিত যে কোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধান অতিথি ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি’র ৮১৭জন অকূতোভয় বীর শহীদদের স্মরণ করেন। এছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ সকল ছাত্র-জনতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ ও আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন।
মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কি.মি. দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্তভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ সব ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনসহ দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সাথে পালন করে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। শুধু তাই নয়; দেশের অভ্যন্তরী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার ক্ষেত্রেও বিজিবি বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হচ্ছে।
কুচকাওয়াজে প্যারেড কমান্ডার ছিলেন, মেজর মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি। এবারের ব্যাচের সেরা রিক্রুট নির্বাচিত হন সাইফ মিয়া।
অনুষ্ঠানে বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকতা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি শুরু হয়। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে ৬৫৮ পুরুষ ও ৩৬ জন নারীসহ ৬৯৪ জন রিক্রুট
সমাপনী কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে সৈনিক জীবনে পদার্পণ করেন।
সব শেষে বিজিবির প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবি’র সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।