চট্টগ্রাম, ২৮ জুন, ২০২২:
করোনা সংক্রমণ ফের আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি চালু সহ ছয় দফা স্বা¯থ্যবিধি মানার নির্দেশনা বাস্তবায়নে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ আজ মঙ্গলবার সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এই চিঠি দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৩ হাজার ৪৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৮৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ। এখন শনাক্তের হার মহামারিতে গড় রোগী শনাক্তের চেয়ে বেশি। সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৭৫, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৮। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০০ জন কোভিড রোগী। তাদের নিয়ে ১৯ লাখ ৭ হাজার ৬৭ জন সেরে উঠলেন। গত এক দিনে শনাক্ত নতুন রোগীর মধ্যে ১৭৯৫ জনই ঢাকা মহানগর ও জেলার বাসিন্দা। এছাড়া রংপুর ছাড়া বাকি বিভাগের ৪০টি জেলায় রোগী ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রামে আশঙ্কাজন বাড়ছে করোনা রোগী। গত দুইদিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৩২ জন। গতকাল চট্টগ্রামে নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অন্যদিকে সারাদেশে গতকাল করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২৮৭ জন। এর আগের দিন সারাদেশে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২০১ জন। এই দুইদিনে সারাদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন মাস্কবিহীন চলাফেরা ও স্বাস্থবিধি মেনে না চলার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার অ্যান্টিজেন টেস্টসহ চট্টগ্রামের ১৩টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন আক্রান্ত ৬৬ জন। নগর এলাকার ৬১ জন এবং ৫ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৮ জন। এর মধ্যে নগর এলাকায় ৯২ হাজার ৫১০ জন এবং উপজেলায় ৩৪ হাজার ৫৬৮ জন। এছাড়া মোট মৃত্যুবরণকারী ১ হাজার ৩৬২ জনের মধ্যে ৭৩৪ জন নগর এবং ৬২৮ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। পৃথিবী যে করোনামুক্ত হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু এখন সবকিছু স্বাভাবিক। বাংলাদেশ ছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। মাস্ক ছাড়া মানুষ সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগের মত কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ ছাড়া সভা-সভাবেশ হচ্ছে। শপিংমল রেস্তোঁরাগুলোতেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থবিধি। সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ ৪-৫ জন হওয়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। একইসাথে উপজেলা পর্যায়ে আমরা আগের করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনার দিয়েছি। মানুষকে সচেতন করার জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছি। একইসাথে আমাদের হাসপাতালগুলোতে যে কোভিড ওয়ার্ড সেগুলো পুনরায় সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছি।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ২৬১ জন। গত দুইদিনে ৫ জন কোভিড রোগী মারা গেছেন। দেশে করোনা মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৪৫ জনে। করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপট কমলে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে এসেছিল। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে ২৬ মার্চ তা একশর নিচে নেমে আসে। গত ৫ মে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমেছিল ৪ জনে। শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে ছিল বেশ কিছু দিন। তবে গত ২২ মের পর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়তে থাকে। ১১ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা গত ১২ জুন একশ ছাড়িয়ে যায়। ১৫ দিনের মাথায় সোমবার তা দুই হাজারের ঘরও ছাড়ায়।
এদিকে এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ মহামারীর চতুর্থ ঢেউয়ে ঢুকেছে বলে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৫৪ কোটি ৪৫ লাখ।
করোনা স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে- ১.স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে গণমাধ্যমকে অনুরোধ জানানো, ২. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম বর্জন , ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি নিশ্চিত করা, ৩.ধর্মীয় প্রার্থনায় মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা, ৪. জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোভিড-১৯-এর উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্কোষা করা, ৫. জন সমাগম হয় এমন কাজে ও স্থানে মাস্ক পরা বাধ্যমূলক করা, ৬. মাস্ক না পরলে আইন প্রয়োগ করা। ছবি: সংগ্রহ করা
Discussion about this post