চট্টগ্রাম, ০৬ আগস্ট, ২০২২:
গতকাল শুক্রবার রাতে সরকারের হঠাৎ ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় আজ সকালে গণ পরিবহণ নিয়ে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়ে চট্টগ্রাম নগর সহ সারা দেশের যাত্রীরা। সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও যানবাহনের দেখা পায়নি। এতে অনেকে হেঁটে, অনেকে রিকশা, সিএনজি অটো রিকশায় কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে কর্মস্থলে না গিয়ে বাসায় ফেরত যেতেও বাধ্য হয়। যারা অনিয়মিত যানবাহনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে গেছে তাদের গুণতে হয়েছে বাড়তি টাকা।
যাত্রীরা মধ্যরাতে জ্বালিানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জ্বালানি দাম বাড়ানোর সময় অবশ্যই যাত্রীদেও ভাড়ার বিষয়টা কি হবে তা সাথে সাথে ঘোষণা করার তাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল। পরিবহনের ভাড়া ঠিক না করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো একটি কা-হীন সিদ্ধান্ত বলে অভিমত যাত্রীদের।
যাত্রীরা জানিয়েছেন, সকালে নগরের প্রায় স্ট্যান্ডে কোনো গণ পরিবহন ছিল না। রিকশা, সিএনজি অটো রিকশা বিভিন্ন পরিবহনে গন্তব্যে যারা গেছে তাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ছিল দুর্ঘটনার ঝুঁকি। দু’একটা গণ পরিবহন ছুটে এলেও ভাড়া দাবি করছিল ২/৩ গণ বেশি। এতে বিপদে পড়া যাত্রীরা আরও বিপদে পড়ে। কোন রকমে এসব গণপরিবনে ঝুলে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছে।
নগরের বহদ্দার হাট মোড়ে অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার একটি কা-জ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তাও রাতের অন্ধকারে। এতে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হাজার হাজার মানুষ কর্মস্থলে যেতে বড় একটা বিপদের মুখে পড়ে। ভাড়া নির্ধারণ না করে এভাবে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার মানে হচ্ছে সরকার জনগণের ভোগান্তির বিষয়ে কিছুই বিবেচনা করেনি। এটা জনসাধারণকে অবজ্ঞা করার সামিল। এটা সরকার করতে পারেনা।
দুই নম্বর গেটের এক কর্পোরেট অফিসের চাকরিজীবী মো হান্নান বলেন, জ্বালানির বাড়ানোর ক্ষেত্রে কারো কোনো মতামত যাচাই করা হয়নি। অন্যদিকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সময় গণ পরিবহনের ভাড়া বাড়লে সেটা এক সাথে নির্ধারণ কওে দেয়া উচিৎ ছিল। অফিসগামী লাখ লাখ মানুষের জন্য এভাবে দুর্ভেঠস সৃষ্টি করা উচত হয়নি।
সেখানে অপেক্ষমাণ আর এক যাত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমার অফিসের ১ ঘণ্টা দেরি হয়ে গেছে। দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে আমি কোনো গাড়িতে উঠতে পারিনি। অনেক হুড়োহুড়ি করেও সম্ভব হয়নি। এভাবে মানুষকে বিপদে ফেলা ঠিক হয়নি।
মো. হাসান নামে এক যাত্রী বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধিও সিদ্ধান্তের সাথে গণপরিবহনের মালিক ম্যমিকদেও সাথে বসে ভাড়া নির্ধারণ করা সংশ্লিষ্টদেও উচিত ছিল। জনগণকে সম্মান না করলে যা হয় তাই তারা করেছে।
এভাবে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, নিউ মার্কেট এলাকার সর্বত্র পরিবহন সংকটে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী মোড়ে মোড়ে টেনশন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কারখানা ও অফিসগামী যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ ছিলনা। এমন সিএনজি চালিত ট্যাক্সি ও রিকশার চাহিদাও বেড়ে গেছে। রাস্তায় চলাচলরত অধিকাংশ সিএনজি অটোতে যাত্রীরা অফিসে গেলে হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি আর গাড়িতে উঠার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা। কেউ কেউ অফিসে গেছেন ভাড়ায় চালিত মোর সাইকেলে। শ্রমজীবীদের অনেকেই ভ্যান ভাড়া করে গন্তব্যে গিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। এবং রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর করা হয়।
তবে শুধু যাত্রীরাই নয়, হুট করে জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধিতে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ উভয়েই বিপাকে পড়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার রাতে সরকারের জ্বালানির দাম বৃদ্ধিও ঘোষণার পর রাত ১০টা থেকে একে একে ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে দামবৃদ্ধির আগে পূর্বের মূল্যে তেল কিনতে হুড়োহুড়ি পড়ে যান পাম্পগুলোতে। এতে নগরীর প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে এক জটলা তৈরি হয়।
এদিকে তেলের দামবৃদ্ধির খবর পেয়ে মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ ধর্মঘটের ডাক দেয়। যদিও তারা পরেরদিন (শনিবার) দুপুরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।
এদিকে চালকদের অভিযোগ, রাত ১২টার পর থেকে নতুন দরে বিক্রি করার জন্য চালকদের তেল প্রদান করা হচ্ছে না। যারা ৫-১০ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছেন, তাদেরকেও এক লিটারের বেশি তেল দেয়নি।
এুরাদপুর মোড়ের বাইক চালক রাসেল বলেন, সরকার কি প্রজ্ঞাপন জারি করল, পাম্পে ঢুকতে গেলে বলে তেল শেষ হয়ে গেছে। প্রজ্ঞাপন হওয়ার আগে তেল থাকলে তবে এখন থাকবে না কেন? পরে অন্য পাম্পে তেল নিতে গেলে ২০ টাকা বাড়িয়ে নিয়েছে।
Discussion about this post