চট্টগ্রাম, ১৯ নভেম্বর, ২০২২:
খাগড়াছড়ি আলুটিলার পাহাড় চূড়ায় পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, দেশের প্রথম অ্যাম্ফিথিয়েটার। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে এ থিয়েটারের উদ্বোধন করেন, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ৬শ ফুট উচ্চতায় পাহাড় রানি হিসেবে খ্যাত খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা। আর সেই আলুটিলার পাহাড় চূড়ায় নবনির্মিত অ্যাম্ফিথিয়েটারে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর চাকমা গীতি-নৃত্য-নাট্য “রাধামন ধনপুদি”র প্রথম বানিজ্যিক শো উপভোগ করেছেন, আগত শত শত পর্যটক। এমন আয়োজন খাগড়াছড়ির পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানান আয়োজকরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রাচীন গ্রিসে অ্যাম্ফিথিয়েটার সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য ব্যবহার করা হতো। জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত আলুটিলা পর্যটন পার্কের নন্দনকানন তৈরি করার সময়ে পাহাড়ের প্রাকৃতিক একটি কার্ভ দেখে অ্যাম্ফিথিয়েটার নির্মাণের চিন্তা আসে। সেই বিশ্ব ঐতিহ্যের অনুরূপ ছোঁয়া পেতে আলুটিলা পর্যটন পার্কে একটি পাহাড়ের খাঁজে পাহাড়ের প্রাকৃতিক বক্রতার সাথে মিল রেখে কোনোরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট না করে গ্রিক স্থাপনার আদলে এই অ্যাম্ফিথিয়েটার নির্মাণ করা হয়েছে। থিয়েটারের নীচতলায় ২৫০ বর্গফুট আয়তনের একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ আছে যেটি শিল্পিদের গ্রিনরুম হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এক হাজার আসনের গ্রিক স্থাপত্য আদলে তৈরি এটিই দেশের প্রথম অ্যাম্ফিথিয়েটার। এখানকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে পর্যটন স্পটে অ্যাম্ফিথিয়েটারের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চায়নের প্রথম উদ্যোগ। নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলের তথা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে এটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। এছাড়াও খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা অসংখ্য দেশি-বিদেশী পর্যটক এই অ্যাম্ফিথিয়েটার মঞ্চে পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ম-িত সাংস্কৃতিক চর্চা উপভোগ করবে। এখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সাথে সবার পরিচয় হবে। ফলে তাদের মাঝে সাংস্কৃতিক চর্চা আরো বৃদ্ধি পাবে। সমতল থেকে আসা পর্যটকরা পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় ও নান্দনিক এই সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবে। এর ফলে সমতল ও পাহাড়ের মধ্যে এক অদৃশ্য সেতুবন্ধন রচিত হবে। পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে এবং পর্যটনের বিকাশ হবে। খাগড়াছড়ির অর্থনীতিতে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, দরিদ্রতা হ্রাস পাবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক দুই বান্ধবী চাঁদনী, জোবাইদা জুই ও মো. আক্তার হোসেন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখে বলেন, এখানে আমরা মূলত বেড়াতে এসেছি। অ্যাম্ফিথিয়েটারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে উপভোগ করলাম। এর মধ্যে দিয়ে আমরা পাহাড়ে ক্ষুদ্র্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা উপভোগ করতে পেরেছি। এতো কালারফুল একটা প্রোগ্রাম দেখে আমরা খুবই মুগ্ধ হয়েছি।
উদ্বোধনের দিন শুক্রবার অন্তত ৫ শতাধিক পর্যটক অ্যাম্ফিথিয়েটারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেছেন।
খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক জিতেন চাকমা জানান, চাকমা লোককাহিনীকে উপজীব্য করে, চাকমা গীতি-নৃত্য-নাট্য “রাধামন ধনপুদি” নির্মাণ করা হয়েছে। আলুটিলা অ্যাম্ফিথিয়েটারে প্রতি শুক্র ও শনিবার এটি পরিবেশিত হবে। আশা করছি, পর্যটকরা এটি দেখে পাহাড়ের সংস্কৃতি সর্ম্পকে কিছুটা হলেও ধারণা পাবেন।
আলুটিলার পাহাড় চূড়ায় পর্যটকদের জন্য নির্মিত এ অ্যাম্ফিথিয়েটারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকায় শুক্র ও শনিবার আলুটিলায় প্রবেশমূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে।
Discussion about this post