চট্টগ্রাম,২৬ নভেম্বর,২০২২:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা আগ্রহ ছিল, টানেল দেখতে চাই। কারণ টানেল একটা বিস্ময়। নদীর তলদেশ থেকে এ ধরনের টানেল বিদেশে দেখেছি। আমাদের এই অঞ্চলে দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। কাজেই এটা দেখার আগ্রহ ছিল।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্থাপিত‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের’ দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন উদ্বোধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
২৬ নভেম্বর সকালে তিনি বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালু করার ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানে।
চট্টগ্রাম প্রান্তে অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে এই দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,
ঢাকায় মেট্রোরেল করার পর চট্টগ্রামেও সমীক্ষা শুরু করেছি। চট্টগ্রামের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থা বিবেচনায় কিভাবে মেট্রোরেল করা যায়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। চট্টগ্রামেও যাতে মেট্রোরেল হয়, এটা আমাদের ইচ্ছা আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, সেটা আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কাজেই ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের যোগাযোগ বা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অথবা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্ত এলাকার যোগাযোগ নেটওয়ার্ক আমরা তৈরি করে দিয়েছি। যাতে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। আমি চাই দেশটা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাক
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টানেল স্থাপনের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ সেখানে যে উন্নয়নটা হয়েছে, বলতে পারেন একটি ডিপ সিপোর্টে রূপান্তর হয়েছে। সেদিক থেকে আমাদের গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা এদেশের সার্বিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করি। চট্টগ্রামের টানেল বাংলাদেশের জন্য শুধু না দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল। এর ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল হবে, অর্থনীতিক কর্মকাণ্ডে আরো গতিশীলতা পাবে। দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখবে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। সাগরের পাড় দিয়ে মেরিন ড্রাইভ হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে আমরা সব সময় বাণিজ্যিক রাজধানী বলে ডাকতাম। চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিই। দুর্ভাগ্যের বিষয় পঁচাত্তরের পরবর্তিতে…….. চট্টগ্রামে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অফিস ছিল সেগুলো ঢাকায় চলে আসে। চট্টগ্রাম প্রায় অবহেলিত অবস্থায় ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর আবার সেই চট্টগ্রামকে নতুনভাবে গড়ে তুলি এবং আমরা সেভাবে কাজ করেছি।….. এই কর্ণফুলী নদী এপারে-ওপারে যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেখানে আমরা বঙ্গবন্ধু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, ওপারে আনোয়ারায় একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই যোগাযোগটা হওয়ার ফলে চট্টগ্রামের দুটি দিকটায় সমানভাবে উন্নত হবে। সমানভাবে কেন, আমি বলব যে, অপর পারটা যেন আরো বেশি পরিকল্পিতভাবে শহর এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন সুন্দরভাবে গড়ে উঠার সুযোগ হয়েছে। যেটাকে বলা হয়েছে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসাবে গড়ে উঠবে। এই টানেলের মাধ্যমে এই সংযোগটা সৃষ্টি হবে। কাজেই আমি বলব- আমাদের শিল্প, বিনিয়োগের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি…. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে, বিনিয়োগের সেই সুযোগটা আমাদের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রামের যোগাযোগটা উন্নতিই হয় না, ৬১ সাল থেকে যাতায়াত করি। আমার বাবা যে বছর জেলের বাইরে থাকতেন আমাদের বেড়াতে নিয়ে যেতেন। সেজন্য চট্টগ্রামের জন্য আমাদের আলাদা একটা টান রয়েছে। কাজেই চট্টগ্রাম- কক্সবাজার রেললাইন করে দিচ্ছি।
টানেল নির্মাণে চট্টগ্রামবাসী সহযোগিতা করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, টানেলের এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি আরো বদলে যাবে। দেশটা আরো এগিয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের এই বন্দর আজকে বিশিষ্ট ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আমাদের প্রবৃদ্ধিতে বিরাট অর্জন চলে আসবে।
মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে উল্লেখ করি তিনি বলেন, কিছুদিন আগে মিরসরাইয়ে পঞ্চাশটা শিল্প কারখানার অবকাঠামো নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেছি। অর্থনৈতিক মন্দার সময় এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের কাছে আসছে। এবং এই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করেছি।
টানেল উদ্বোধন বিরাট অর্জন বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত, যেটা আমরা শুরু করেছিলাম, আজকে সেই কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই কাজ সম্পন্ন করারই উৎসব উদযাপন আমরা করছি। আর কিছুদিন পরে দুটি টিউবের কাজ যখন সম্পন্ন হবে পুরো টানেলটা আমরা উদ্বোধন করব। …… একটা টিউব দিয়ে যাতায়াত করাটা সমীচীন হবে না বলেই আমরা, এটা এখন উদ্বোধন করে দিচ্ছি না। এবং একটা দিয়ে গাড়ি যাবে, অন্যটা দিয়ে গাড়ি আসবে। দুটো আমরা একসাথেই করে দেব। যেহেতু একটা সম্পন্ন হয়েছে, আমাদের ইচ্ছা আমরা এটা দেখতে চেয়েছি, এটাই উৎসব যে একটা টিউবের কাজ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করেছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের,মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রাম প্রান্তে বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
চীন ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণ করা হচ্ছে। ছবি: সংগ্রহ