চট্টগ্রাম, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২:
দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে দলটির দিকনির্দেশনা অনন্য অবদান রেখেছে সেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামী কাল ২৪ ডিসেম্বর। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলন।
এর আগে ২০১৯ সালের আওয়ামী লীগের ২১ তম সম্মেলন হয়েছিল ২০-২১ ডিসেম্বর। সেই সম্মেলনে নবমবারের মত আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়েছিল ওবায়দুল কাদেরকে। তিনিও সেই সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মত সভাপতি হন।
পদ্মা সেতুর উপর আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলনমঞ্চ। প্রবেশের জন্য পাঁচটি গেট থাকবে। এর মধ্যে একটি ভিআইপি গেট, বাকি চারটি কাউন্সিলরদের প্রবেশের গেট।
মঞ্চে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যু’ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল সহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলোর জলছাপ থাকছে। থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ছবির পাশাপাশি শেখ হাসিনা, জাতীয় চার নেতার ছবি ।
এবারের সম্মেলনে দলটির শ্লোগান ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। অর্থাৎ ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনই হচ্ছে ক্ষমতাসীন এই দলটির লক্ষ্য।২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মপরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। এর রূপরেখায় কী থাকবে এর বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে। জানা গেছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পরবর্তী ধাপ হিসেবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ধারণাটি বেছে নেওয়া হয়েছে।ডিজিটাল সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট ভবিষ্যৎপ্রজন্ম সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবে আওয়ামী লীগ ।
স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি ভিত হচ্ছে —স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি।
এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি মেখ হাসিনা বলেছেন, “সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে, নাগরিকেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে।”
ডিজিটাল বাংলাদেশের পাশাপাশি ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র ধারণাও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের।
কাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। দুপুরে খাবার ও নামাজের বিরতির পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বসবে দ্বিতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। সেখানেই নির্বাচন করা হবে নতুন নেতৃত্ব।
আওয়ামী লীগ দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটর কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। বুধবার থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট কার্ড বিতরণ শুরু করে দলটি। আজ শুক্রবার পর্যন্ত এসব কার্ড বিতরণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে নিবন্ধিত সব দলকে দাওয়াত দেওয়া হবে।
এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র প্রণয়নে তৃণমূল নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাছাই করা ২০টির বেশি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গঠনতন্ত্রে একজন নেতা কতটি পদে থাকতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে নেতাদের সম্পদের হিসাব প্রদান এবং ঘোষণাপত্রে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ থিমের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিটি কমিটিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণসংযোগবিষয়ক সম্পাদক ও উপকমিটির সম্পাদক পদ সৃষ্টির প্রস্তাব এসেছে।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন টাঙ্গাইলের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরবর্তীকালে, ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ আওয়ামী মুসলিম লীগে যে কাউন্সিল হয়, সেখানে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। ফলে অমুসলিমরাও এই দলে যোগ দেয়ার সুযোগ পান।বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার হতে শুরু করে।’১৯৫২ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। পরের বছর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচী ঘোষণা করার পর মাওলানা তর্কবাগীশসহ অনেকেই তার বিরোধিতা করেন।
‘ওই বছর মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ।
Discussion about this post