চট্টগ্রাম, ১০ মে, ২০২৩:
বান্দরবানে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়িসহ নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরির ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বান্দরবানে কলাগাছের সুতা দিয়ে আরও একটি উন্নত মানের কলাবতী শাড়ি তৈরি হচ্ছে। রোববার চরকায় সুতা কাটা শেষ করে সোমবার শুরু হয়েছে শাড়ি বুননের কাজ। কালাঘাটার পিস হস্তশিল্প কেন্দ্রে বুননশিল্পীরা এখন এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। বুনন শেষ হলে শাড়িটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা সংস্থা পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) সাইং সাইং উ মারমা। উন্নত মানের কলাবতী শাড়ি তৈরির আগে পরীক্ষামূলক প্রথম কলাবতী শাড়ি বুনন করা হয়েছিল। পরীক্ষামূলক প্রথম কলাবতী শাড়ি বুননশিল্পী হিসেবে ছিলেন মৌলভীবাজারের রাধাবতী দেবী। ওই সময়ে কলাবতী শাড়িটি মসৃণ ছিল না। তাই আরও মসৃণ শাড়ি বুনতে প্রশিক্ষক হিসেবে উন্নতমানের কলাবতী শাড়ি বুননে এসেছেন মৌলভীবাজারের কবিতা দেবী। কারিগর হিসেবে কাজ করছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দত্ত সিংহ।
এজন্য বান্দরবান জেলা শহরের কালাঘাটায় উদ্যোক্ত প্রতিষ্ঠান পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের কার্যালয়ে কলাগাছের তন্তু দিয়ে সুতা তৈরি কাজ চলছে। পাহাড়ি ও বাঙালি নারীরা কাজ করছেন। কোমর তাঁতের মাধ্যমে কলাবতী শাড়ি বুননের কাজ চলবে। এবারের শাড়িটি সিল্ক ও কলাগাছের তন্তুর সুতার সংমিশ্রণে কলাবতী শাড়ি তৈরি করা হবে। এতে করে আরো মসৃণ হবে বলে জানিয়েছেন কারীগর দত্ত সিংহ।
পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইং সাইং উ মারমা বলেন, এবারের কলাবতী শাড়ি আগের চাইতে আরো উন্নতমানের হবে। তাই তিনি নিজেও কাজ করছেন। এই কলাবতী শাড়ি তৈরির পেছনে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি হলেন প্রধান উদ্যোক্তা। তার উৎসাহ ও সহযোগিতায় কলাবতী শাড়ি তৈরি হচ্ছে। এই কলাবতী শাড়ি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়া হবে।
কলাগাছের সুতায় কলাবতী শাড়ি তৈরির আগে থলে, ঝুড়ি, হাতের ব্যাগ, কানের দুল, পর্দা, পুঁতির মালা, নেকলেসহ, অফিসের কাজের ফোল্ডার, থামি (পাহাড়ি নারীদের পরনের কাপড়), পাপসসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি হয়েছিল। কলাগাছের সুতায় তৈরি সামগ্রি পরিবেশবান্ধব। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জেলার সাত উপজেলার প্রত্যন্ত নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারাই কলাগাছের সুতা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছে। সেই পণ্য বিক্রি করে স্থানীয়ভাবে তারাও লাভবান হচ্ছে।
কলাবতী শাড়ির নতুন প্রশিক্ষক কবিতা দেবী বলেন, উন্নতমানের কলাবতী শাড়ি বুননের কাজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। কতদিন লাগবে সঠিক জানিনা। তবে আনুমানিক ১২-১৫দিন সময় লাগতে পারে। কলাবতী শাড়ি আরো উন্নতমানের ও মসৃণ করে তুলতে প্রয়োজন উন্নতমানের স্পিনিং মেশিন (সুতা কাটার যন্ত্র)। কলাগাছের তন্তুকে ম-ে পরিণত করে স্পিনিং মেশিনে সূক্ষ্ম ও মসৃণ সুতা পাওয়া যাবে। সেই সুতায় উন্নতমানের কাপড় বানানো সম্ভব।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এই কাজের শুরুটা করা হয়েছে। বিশে^র দরবারে এই কাজকে পৌঁছে দিতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন।
অপরদিকে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরিসহ নানান ধরনের হস্তশিল্পের কাজ পরিদর্শন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.মোস্তফা কামাল মজুমদার। তারা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বান্দরবানের নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো বেশি বেশি প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সরকারি বিভিন্ন ঋণ সহায়তা আশ্বাস দেন।
গত ১ এপ্রিল বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণায় দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হয়েছিল ১৩ হাতের কলাগাছের সুতা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন শাড়ি।
Discussion about this post