চট্টগ্রাম, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩:
আজ থেকে শুরু হয়েছে ভারতের নয়া দিল্লিতে দুই দিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলেন। সম্মেলনে খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, আর্থিক ও প্রযুক্তিখাতে সহায়তা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থায়ন, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পূনরুদ্ধারে সহায়তা নিয়ে আলোচনা হবে। ভারতে বিশ্ব নেতাদের সম্মেলনে স্বল্প আয়ের দেশ সমূহের ভাগ্য নির্ধারণে অবিলম্বে গ্যাস-কয়লা-তেল ভিত্তিক জীবাশ্মা জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ, বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা, দারিদ্রকরণের নীতি বর্জন করা, জ্বালানি খাতে সক্ষমতা বাড়ানো ও কার্বন নিরসনে অর্থায়ন করার দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্যাব-চট্টগ্রাম, ক্যাব যুব গ্রুপ, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্ম জোট (ক্লিন) ও বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লজিইডি)।
৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরের ২নং গেইট কর্ণর্ফুলী কমপ্লেক্স চত্বরে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে এই দাবি জানানো হয়।
আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী ও এডাব চট্টগ্রামের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ন্যাশনাল আওয়ামী লীগের (ন্যাপ) কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব বায়েজিদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ব ম হুমায়ুন কবির, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপের সিনিয়র সহ-সভাপতি নিলয় বর্মন, যুব গ্রুপের সদস্য মোঃ ওমর ফারুক, রাসেল উদ্দীন, একরাম ইকু, তানিয়া সুলতানা, মোবাশ্বির, আবুল কাসেম, সুরমী দাস, মেরাজ চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে বর্তমান বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার জ্বালানি নীতি অনুসরণ করে গ্যাস, কয়লা, তেল ও ইউরেনিয়াম থেকে ৩৭, ৪০, ১০ ও ৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। একইভাবে ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে গ্যাস, কয়লা, তেল ও ইউরেনিয়াম থেকে যথাক্রমে ৪৩, ৩২, ২ ও ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর শুধু জ্বালানি আমদানিতে ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এর মধ্যে ২৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানিতে লাগবে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। বছরে ২ দশমিক ৫ কোটি টন কয়লা আনতে খরচ হবে পাঁচ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং নিউক্লিয়ার জ্বালানি আমদানিতে লাগবে ৯ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ ও দেশে উত্তোলিত গ্যাস কিনতে বছরে চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। জুলাই পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে শেভরনের পাওনা ২৮ কোটি ডলার। এলএনজি আমদানি খাতে বকেয়া প্রায় ১০ কোটি ডলার। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকারের কাছে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাবে। বিপিসির কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর পাওনা ১০ দশমিক ৬ কোটি ডলার।
সেকারণে বাংলাদেশ এক সংকটাপন্ন অবস্থানের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশকে আর ডলার সংকটের দিকে ঠেলে না দেবার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম নিয়ামক হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত। আগামি ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। যেখানে ২০১৩ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিলো ১৩৯ কোটি ডলার, ২০২২ সালে সেটা ২০২২ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ দাড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৮২ শতাংশই গ্যাস, কয়লা ও ডিজেলভিত্তিক এবং অধিকাংশই আমদানি নির্ভর। যার সিংহভ্গাই জি-২০ ভুক্ত দেশসমূহ থেকে আমদানি হয়। পিডিবি ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুতকেন্দ্রভাড়া দিতে হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ১৫ বছরে ১৩ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এর মধ্যে এ বছরের প্রথম তিন মাসে বাড়ানো হয় তিনবার, ওদিকে বসে বসে কেন্দ্রভাড়া পাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা ৭৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। স্পট মার্কেটে দাম বাড়ায় সেটির আমদানি সীমিত করেছে সরকার। আর এ বছরই এলএনজি আমদানি করতে সরকারের ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
যদিও পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর বেসরকারি খাতের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ সমাপ্তির দিকে, সেসব কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। যার সংস্থান নিয়ে রয়েছে শংকা। তাই জি-২০ ভুক্ত নেতাদের কাছে গ্যাস, কয়লা, তেলভিত্তিক জ্বালানিতে বিনিয়োগ না-করে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।
Discussion about this post