চট্টগ্রাম, ৮ অক্টোবর, ২০২১:
আওয়ামী লীগ নির্বাচনের কথা বলতেই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে।তর্ক জুড়েছে বিএনপি। শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই সিদ্ধান্ত হবে কমিশনের। েএতে যোগ দিয়েছে অন্যান্য দলগুলোও। সাথে এসেছে এখন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দও।
আওয়ামী লীগ বলছে – বিগত দুই বারের মত সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমেই পরবর্তি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। বিএনপি বলছে -তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।তিারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে চায়।
বিএনপি ছাড়াও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশন গঠনের জন্য আইন করা দরকার।
আজ বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভি বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার যদি কোনো কথা না শোনে তাহলে রাজপথেই চূড়ান্ত ফয়সালা হবে । বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ভোটারদের আস্থা ফেরাতে হলে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হলে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিতাড়িত করতে হবে। পরিষ্কার করে বলতে চাই-নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামীতে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে নেমে এ সরকারকে হটিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবোই। দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আগের দিন বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার নিন্দা জানান বিএনপির এই মুখপাত্র। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন,‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচনে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। দেশে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই কেবল নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে। ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে স্বীকার করে নিলেন তাদের অধীনে অতীতের সকল নির্বাচনে সরকার হস্তক্ষেপ করেছে।
উল্লেখ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। আইন অনুযায়ী বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করবেন। নতুন কমিশন পরবর্তী ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবে। নতুন কমিশনই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করবে।সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সব সময় সিইসি ও ইসি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু ২০১২ ও ২০১৭ সালে সর্বশেষ দুটি কমিশন গঠিত হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নামের সুপারিশ তৈরি করতে চার সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারককে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিতে সদস্য হন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান। নতুন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিগত দুই কমিশনের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করার পক্ষে। আর সংসদের বাইরে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে কি না, সেটার ঠিক নেই। তবে কোনো আমলা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হোক, এটি তারা চায় না। বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই চায়। পাশাপাশি বিএনপি নেতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশন গঠনের জন্য আইন করা দরকার। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা ভালো হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত দুটি নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে করলেও বর্তমান কমিশনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। তারা বলেছে, বর্তমান কমিশনের অনেক কর্মকাণ্ডই আপত্তিকর। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সংবিধানের নির্দেশনা মোতাবেক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে আরও ভালোভাবে ও স্বাধীনভাবে কাজ করা নিয়ে বিএনপির যদি কোনো প্রস্তাব থাকে তাহলে তারা তা দিতে পারে। সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। জনবিচ্ছিন্ন দল বিএনপির উচিত এখন জনগণের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া। নির্বাচন কমিশন নিয়ে ভাবার তাদের দরকার নেই।
বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্য ‘নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে জনগণকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে’ এর জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল বলেন, আমাদের দেশে কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, তারা বিভিন্ন সময়ে যদি এ ধরনের কথাবার্তা না বলেন, তাদের যে বুদ্ধি আছে এটা তো জনগণ জানবে না। এজন্যই তারা কথাগুলো বলেন। আর সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত গত নির্বাচন কমিশনে বিএনপি’র ঘোরতর সমর্থকও একজন সেখানে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সার্চ কমিটি যে সঠিকভাবে কাজ করে, নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকালেই সেটি বোঝা যায়। এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
বাংলাদেশে আর কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই নির্বাচনের সময়ে নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে, রুটিন কাজ করবে। আর নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় না। সবদেশে তাই হয়, আমাদের দেশেও তাই হবে। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভারত বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ সেখানে হয়, কন্টিনেন্টাল ইউরোপের সবদেশে হয়, জাপানে হয়, অস্ট্রেলিয়াতেও যেভাবে হয়, আমাদের দেশেও একইভাবে নির্বাচন হব।দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিকক এই তর্ক কত মাঠ কাঁপায় তা এখন দেখার বিষয় হয়ে উঠেছে। েএই বিতর্ক আদৌ েহালে পানি পাবে কিনা – তা কেবল সময়ই বলে দেবে।