চট্টগ্রাম, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩:
যানজটে অচল হয়ে পড়ছে পুরো চট্টগ্রাম নগরী। দিন দিন ভয়াবহভাবে যানজট বাড়ছে নতুন নতুন পয়েন্টে। দুর্বিসহ যানজটে নগরের মানুষের ভোগান্তিও চরমে উঠেছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটে পড়ে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে প্রত্যেকদিন। এক ঘণ্টার যাত্রা পথে ব্যয় হচ্ছে দ্বিগুণ সময়।
সাধারণ যাত্রীরা জানিয়েছেন, যানজট নগরীর প্রধান সড়ক থেকে ছড়িয়ে পড়েছে গলি- উপগলি পর্যন্ত।
আর প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে আগ্রাবাদ, বন্দর এলাকা, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দার হাট, নিউ মার্কেট সহ বিভিন্ন সড়কের মূল স্পটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বিরক্তির শেষ থাকে না যাত্রীদের। এতে কর্মস্থলে যেতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। দেরিতে অফিসে যাওয়ায় জবাবদিহি করতে হচ্ছে চাকরিজীবীদের।
চকবাজার এলাকার এক পথচারি রাসেল বলেন, যানবাহনে কোথাও যাওয়া এখন বড় হয়রানির নাম। আর হাঁটা পথে গেলেও ফুটপাত নেই। সব দখলে চলে গেছে ফুটপাত দখলকারী ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছে। হেঁটে যাওয়াও কঠিন।
শমিক বড়ুয়া নামে চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লার এক পথচারি বলেন, ফুটপাত দখল করেছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা। আর সড়ক দখল হয়ে আছে রিকশা পার্কিং আর বিভিন্ন ইঞ্জিনচালিত গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে। তিনি বলেন, সড়কে কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই।
এমরান নামে এক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী জানান, চট্টগ্রামে নতুন সড়ক আর সড়ক সম্প্রসারণ হয়েছে প্রচুর কিন্তু কিছুই পরিকল্পনা মাফিক হয়নি। তিনি নতুন ব্রিজ থেকে চন্দনপুরা পর্যন্ত এক্সেস সড়কটি সিরাজদৌল্লা সড়কে যানজট বাড়িয়েছে বলে জানান। এই সড়কের শেষে যে চত্বর করা হয়েছে তা সিরাজদৌল্লা রোডের মাঝে এসে পড়েছে বলে জানান। যে কারণে এক্সেস রোডের গাড়ি ঘুরানোর সময় সিরাজদৌল্লা রোডে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
আলমগীর নামে এক যাতায়াতকারী বলেন, সড়ক সম্প্রসারণ হয়েছে ঠিকই তা যাতায়াতের জন্য মানুষ ব্যবহার করতে পারছে না। তা ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণের পর ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে।
যাত্রীরা জানান, বর্তমান যে যানজট গত এক দশকে চট্টগ্রাম নগরীতে এমন যানজট দেখা যায়নি। এক একটা জ্যাম থেকে যাত্রীদের ছাড়া পেতে এক ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যানজট ছাড়াতে ট্রাফিক পুলিশদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।
নিত্যদিনের যাতায়াতকারীরা জানান, বহদ্দার হাট থেকে দুই নম্বর গেট পর্যন্ত যে যানজট তা সাধারণ যাতায়াতকারীদের জন্য ভোগান্তির প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সকালে ও দুপুরে এই যানজট চরম আকার ধারণ করে।
চলাচলকারীরা জানান, দুই নম্বর গেটের ট্রাফিক সিগনাল বহদ্দার হাট থেকে দুই নম্বর গেট পর্যন্ত যানজট সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
যাত্রীরা বলেন, দুই নম্বর গেটে উড়াল সড়ক থাকার পরও এরকম ট্রাফিক জ্যাম চট্টগ্রাম নগরীর মানুষের কাছে দুঃস্বপ্নের মত।
এ ব্যাপারে দুই নম্বর গেটের ট্রাফিক ডিউটিতে যারা থাকেন তাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ অপরিকল্পিত বলে জানানা যাতায়াতকারীরা।
তবে সম্প্রতি বহদ্দার হাট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত যানজট বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ গত বর্ষার জলাবদ্ধতায় বহদ্দার হাট, শুলক বহর এলাকা পর্যন্ত ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক সংস্কার না করা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও এই সড়ক সংস্কার করতে পারেনি।
গত এক দশকে চট্টগ্রাম নগরীতে সড়ক পথের উন্নয়ন হয়েছে, বিকল্প সড়ক নির্মাণ, উড়াল সড়ক বানানো, সড়ক সম্প্রসারণ সহ সড়কের নানা সংস্কার করা হলেও সেসব ছাপিয়ে যানজট নিত্য যাতায়াতকারী নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।
অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশও সড়কে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যানবাহন চলাচলে সহায়তা করলেও যানজট কমাতে তার প্রভাব বেশিদিন থাকে না।
যেসব কারণে যানজট প্রতিদিন বাড়ছে তার মধ্যে অনেক কারণ রয়েছে।
মালবাহী ট্রাক, ভ্যান লরি, কাভার্ড ভ্যান রাতের বেলা মালামাল পরিবহনের কথা থাকলেও দিনের বেলা নগরীত শৃঙ্খলা ভেঙ্গে এসব ভারী যানবাহন চলছে। অন্যদিকে আন্তজেলা বাস ও বিভিন্ন কোম্পানির দূরপাল্লার বাস শহরে ঢুকে বিভিন্ন পয়েন্টকে স্ট্যান্ড হিসাবে ব্যবহার করে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করছে।
এ ব্যাপারে মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার কীর্তিমান চাকমা বলেন, নগরীতে গাড়ি বেড়েছে, মানুষও বেড়েছে। যে কারণে যানজট বাড়ছে। ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে। কিন্তু শুধু ট্রাফিক পুণলশ চাইলেই যানজট কমানো যাবে না। যানজটের কারণ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।
Discussion about this post