চট্টগ্রাম, ৭ অক্টোবর, ২০২৩:
ক্রিকেট বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেের জয়ের পরও আজ খুব কষ্ট পেলাম। যে দাগ কখনো মুছবে না। সারা জীবন আমাদেরকে বাংলাদেশি হিসেবে,বাঙালি হিসেবে এই গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে।
ক্রিকেটিয় ভব্যতার কোন বালাই নেই। সাকিব খেলা শেষে বললেন, তার এক সতীর্থ এসে জানালেন- ‘এখন চাইলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস কিন্তু আউট’। আর নিয়মটা মনে করিয়ে দিলেন, আর তিনিও আবেদন করে বসলেন।
এর আগে কী ঘটেছিল- সেটা সবার জানা।বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নেমে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। সেখানেই ঘটেছে নাটকীয় ঘটনা। টাইম আউট হয়েছেন লঙ্কান ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইম আউট হলেন তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আবেদনে।
শ্রীলঙ্কা দলীয় ১৩৫ রানে আউট হন সামাবিক্রমা।
এরপর ক্রিজে আসেন ম্যাথুস। তবে তিনি যেই হেলমেট নিয়ে নেমেছিলেন, তা পুরো নিরাপদ ছিল না। তাই পরে আরেকটি হেলমেট আনা হয়, কিন্তু সেটিও উপযুক্ত মনে করেননি ম্যাথুস। এমসিসির আইনের ৪০.১.১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, একজন ব্যাটার আউট হয়ে যাওয়ার পর ২ মিনিটের মধ্যে পরবর্তী ব্যাটারকে খেলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। কিন্তু ম্যাথুস সেটি করতে পারেননি। আর তাই বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে টাইম আউট হন ম্যাথুস।
আম্পায়ারকে তার খেলা পরিচালনা করতে গেলে কোন নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু সাকিব তো আউট দেয়ার পরও ম্যাথিউসকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন। শুধুমাত্র একটা ম্যাচ অথবা একটা চ্যাম্পিয়ন ট্রফি বা একটা জয় ছাড়া কোন বিকল্প নেই। সেই হিসেবটা করেই ইতিহাসের এই কলঙ্কজনক আউটটা নিলেন কী সাকিব আল হাসান?
সবাই হয়তো সকিবের ক্রিকেটিয় স্মার্টনেসকে এগিয়ে রাখবে, স্যালুট জানাবে। কিন্তু আমি এটাকে সমর্থন করি না, আর কখনো করবোও না। কারণ বাংলাদেশ মাঠের যে খেলা তাতে পেরে উঠছে না। তাই বলে ক্রিকেটিয় স্পিরিটের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকতে চায় বা এগিয়ে থাকুক সেটা কেউ চাইবে না। ম্যাথিউস বলার পরও সাকিব পাত্তাই দিলেন না। আর কারণটা কি? সেইফটি ইস্যু, আর সময়ের হেরফের মাত্র ৫ সেকেন্ড।
আমরা মাথায় বল লেগে অনেক প্লেয়ারকে মারাত্মক আহত হতে দেখেছি। এমন কি মারা যেতেও দেখেছি। যারা এটাকে সমর্থন করছেন তার কি বলতে চাইছেন ম্যাথিউস ঐ অবস্থায় একটা বল খেলুক বা একটা বল হেলমেট ছাড়া খেলুক আর মারা যাক। আমি এটাও বলতে চাইছি না একটা বল খেললেই তিনি মারা যাবে। কিন্তু সে রিস্কটা নিবেন কেন?
বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করার ফলে সেইফটি ইস্যু কি, সেটা বোঝার সামান্য সৌভাগ্য হয়ছিল। আমাদের কাপতান নাকি বিদেশে বেশির ভাগ সময় অবস্থান করেন। এই তার নমুনা?
বাংলাদেশ নাকি খুব এগিয়ে যাচ্ছে। আসলে আমরা যতই আগাই না কেন আমরা নৈতিক, মানবিক উন্নতিতে হাজার বছর পিছিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই হয়তো কাপতানের পক্ষে অনেক সাফাই গাইবে। কিন্তু এটা কতটা ক্রিকেটিয় ভব্যতার মধ্যে পড়ে? ক্রিকেটের ১৫০ বছরের ইতিহাসে তিন ফরমেট মিলে ১৯৬৫৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের পর ১৯৬৫৭তম ম্যাচে টাইমড আউট আপিল করে বসল!
যদিও এ ঘটনা এর আগে ৬ বার ঘটেছিল, তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না। কি দারুণ ইতিহাস রচনা করলো বাংলাদেশ! ধন্য বাংলাদেশ ধন্য।তাহলে এই ১৫০ বছরের ইতিহাসে কেউ দেরি করে আসেননি। একটা অবোধ বা যে ক্রিকেট বোঝে না সেও এটা বিশ্বাস করবে না।
যদি ইচ্ছাকৃত দেরি করতেন তাহলে একটা কথা ছিল। কারণটা ছিল যৌক্তিক, কারণটা কি? জুতসই হেলমেটের বিষয়। মানুষ নির্লজ্জ হতে পারে তা বলে এতটা, মানুষ অমানবিক হতে পারে, তা বলে এতটা, অভব্য হতে পারে, তা বলে এতটা! সত্যিই সেলুকাস, বাংলাদেশিরা সব পারে।
আমি ইন্ডিয়া, পাকিস্তান এমনকি অস্ট্রেলিয়া এদেরকে স্লেজিং এর জন্য বা বিরূপ অঙ্গভঙ্গির জন্য খুব অপছন্দ করতাম, তবে কিছু নির্দিষ্ট খেলোয়াড় বাদ দিয়ে। এখন কি দেখলাম বাংলাদেশ তাদেরকেও হার মানিয়েছে। আজ ওয়ালস, এমব্রোসদের খুব মনে পড়ছে।
ছোট কাল থেকে শুনে এসেছি ক্রিকেট নাকি ভদ্রলোকের খেলা! এই তার নমুনা!
বাংলাদেশ আজ যে রেকর্ড করলো বা অন্যকে পথ দেখালো, জানিনা আর ঘটবে কিনা এ ঘটনা, তবে দু চার বার বিশ্বকাপ জিতেও বাংলাদেশ তার কলংক মুছতে পারবে না।
‘সরি ম্যাথিউস! তোমাকে আমাদের ভব্যতা দিয়ে ক্রিজে ফিরিয়ে আনতে না পারার জন্য’।
আগে খুব গর্ব হতো আমাদের একজন সাকিব আছেন, (যদিও আমার পছন্দের খেলোয়াড় মুশফিক) এখন লজ্জায় মাথা হেট হতে হবে, আমাদের একজন সাকিব আছেন। যিনি এতটা নির্লজ্জ না হলেও পারতেন।
তারপরও বলি- ক্রিকেটিয় ক্রিকেটের জয় হোক।
Discussion about this post