চট্টগ্রাম, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩:
চট্টগ্রামের বহুল প্রত্যাশিত প্রায় ১৬ কি.মিটার দীর্ঘ মহিউদ্দিন চৌধুরী উড়াল সড়কের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উড়াল সড়ক সহ আজ গণভবন থেকে চট্টগ্রামে ১৬ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দিন সারাদেশে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৪টি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসব প্রকল্পের ব্যয় ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। এ সময় গণভবনের সঙ্গে ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সারা দেশের ১০১টি প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল।
মহিউদ্দিন চৌধুরী উড়াল সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরজমিনে এসে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কিন্তু প্রকল্পটি কোভিডের কারণে নির্মাণ কাজে ভাটা পড়ে। এরপর বন্দর আপত্তি তুলে। এরকম নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। প্রকল্পের শেষ প্রান্ত সিবিচ থেকে টাইগার পাস প্রান্ত পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে। লালখান বাজার পর্যন্ত এখনো কাজ বাকি আছে। ১৫ টা র্যাম এবং সাড়ে ১৫ কিমি. মূল ফ্লাইওভার সহ সর্বমোট ব্যয় ৪২৯৮ কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নিচে সড়কের প্রশস্ততা যাতে না কমে সেই চেষ্টা করা হয়েছে। গণপূর্ত, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, ২৬ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেট, রেলওয়ে থেকে জায়গা নেওয়া হয়েছে। মূলত নিচে রাস্তার প্রশস্ততা যাতে না কমে সেজন্য এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়। এতে কোথাও প্রশস্ততা না কমে কোথাও কোথাও বেড়েছে। উড়াল সড়ক থেকে নামার (র্যাম) জন্য যে ১৫ পয়েন্ট আগ্রাবাদ, টাইগার পাস, হালিশহর, কেইপিজেড সহ ১৫ টি পয়েন্টে উঠা নামা করতে পারবে।
সিডিএ সূত্র জানায়, এটা আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার হয়ে উত্তর চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ করবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে ব্যবহার করে কর্ণফুলী টানেল হয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে বাস্তবায়নের ফলে চট্টগ্রাম শহরের যানজট থাকবে না। এই প্রকল্পের লক্ষ্যই ছিল চট্টগ্রাম নগরের যানজট কমানো।
কেইপিজেড, সিইপিজেডের ১০/১২ হাজার গাড়ি এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে হয়ে শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে কম সময়ে যেতে পারবে। হালিশহরের বসবাসকারীদের মূল শহরে আসাযাওয়াও সহজ হয়ে উঠবে। মেূলত যানজটের কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যবসাবাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও বন্দরের কার্যক্রমের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছিল।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম নগরে প্রবেশ করতে ২০ মিনিট লাগবে বলে চট্টগ্রাম উন্নয়নকর্তৃপক্ষ জানায়। আগে যেখানে সময় লাগত ১ ঘণ্টা বা কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি।
যেকারণে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে চালু হলে চট্টগ্রাম নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ী সহ সকল উদ্যোক্তারা। এই এক্সপ্রেস ওয়ের কারণে চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন।
পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিমি. দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে লালাখান বাজারে এসে যুক্ত হবে নগরের আখতারুজ্জামান উড়াল সড়কের সঙ্গে। যেটি বহদ্দার হাট থেকে আবার চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কে যুক্ত হয়েছে। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আমূল পরিবর্তন আসবে।
অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়েটি পতেঙ্গার অংশে বিমানবন্দর ছাড়া কর্ণফুলি নদীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেলের সাথে যুক্ত হবে। যাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেলের গুরুত্ব আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করবে।
অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোডের সাথে। যেটি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, এবছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে বিমানবন্দর সড়কসহ নগরীর সব সড়কে কমবে যানবাহনের চাপ। আর তা সামাল দিতে এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মোট নির্মাণ ব্যয় ৪২৯৮ কোটি টাকা। যৌথভাবে নির্মাণ কাজ পায় বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও চীনা প্রতিষ্ঠান র্যাঙ্কিন।
উড়াল সড়কের৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে র্যা ম নির্মাণ এখনো শুরু হয়নি। সম্পূর্ণ উড়াল সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় র্যা মের কাজ শুরু করেনি। কারণ এতে যানজট বেড়ে যাবে। মূল ফ্লাইওভার যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পর র্যা মের কাজ শুরু হবে। এক বছরের মধ্যে র্যা মের কাজ শেষ করতে পারবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান।
প্রজেক্টের শেষ প্রান্তে এবং শুরুতে র্যা ম পয়েন্টে টোল প্লাজা স্থাপন করা হবে। ফ্লাইওভারে লাইট ও আড়াইশ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এসব ক্যামেরা চট্টগ্রাম ট্রাফিক পুলিস সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মহিউদ্দিন চৌধুরী উড়াল সড়ক উদ্বোধনের সাথে সাথে সিডিএ’র জানে আলম দোভাষ সড়ক ও বায়েজিদ থেকে ফৌজদার হাট লিঙ্ক রোড অর্থাৎ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা সড়ক উদ্বোধন করেন।
Discussion about this post