চট্টগ্রাম, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩:
চট্টগ্রামে সংসদীয় এলাকার ১৬ আসনের মধ্যে আটটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের লড়াই করতে হবে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে। যেখানে শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রার্থী না থাকলেও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই কঠিন প্রতিপক্ষ হিসাবে লড়াই করবে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের জয় পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। কারণ এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনপ্রিয়তার দিক থেকে দলীয় প্রার্থীদের চেয়ে কম নয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুই পক্ষেই বিভক্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দুর্বল ও বিতর্কিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে বলে ভোটারদের ধারণা।
আসনগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে সবচেয়ে বড় লড়াই হবে পটিয়ায়, চট্টগ্রাম-১২ আসনে। সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থানে আছেন। তিনি পটিয়ার তিন তিন বারের সংসদ সদস্য। তার সাথে লড়তে হবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে।
চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। এই আসনে ভোটের মাঠে আছেন আরও দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব এই আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। আবু তৈয়ব স্থানয়ি আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। তিনি সংসদ সদস্য পদে লড়ার জন্য ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদ ত্যাগ করেছেন। ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগে যথেষ্ট প্রভাব আছেন করিকতের নজিবুল বশর মাইজভা-ারীর। দলীয় নেতাকর্মীরাও এই তিন নেতাকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ভোটের মাঠে তিনজনই আধিপত্য বিস্তার করবেন। তবে জোটের ভাগে পুনরায় আসনটি ছাড় দিলে সরতে হতে পারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সনিকে। হোসাইন মো. আবু তৈয়বের সাথে লড়াই করতে হবে বর্তমান সংসদ সদস্য নজিবুল বশরকে।
ফটিকছড়ির স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব বলেন, দল কাকে মনোনয়ন দিয়েছে সেটি আমার দেখার বিষয় না। দল প্রতিটি আসনে প্রার্থী উম্মুক্ত করে দিয়েছে। যে কারণে আমি প্রার্থী হয়েছি।
চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ আসনেও আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার সাথে লড়াই করবেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। যেখানে মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-ডবলমুরিং) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিএনপির সমর্থিত সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি থেকে দূরে থেকে আওয়ামী লীগে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন এই নেতা। চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম মেয়র ছাড়া কাউন্সিলল হিসাবে তিনি দীর্ঘ সময় জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাদরেল আওয়ামী লীগ নেতা, মনজুর আলমের গুরু মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন।
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ব্যক্তির শক্তি দলের চেয়ে বড় হতে পারে না। দুই বার বিএনপিতে যাওয়া ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সাথে পেওে উঠবে না।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সংসদ সদস্য এমএ লতিফ। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। যিনি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতা। সুমনের পক্ষে নগর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ কাজ করবেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ আসনে নজরুলকে টেক্কা দিতে মাঠে নেমেছে পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী। গত উপজেলা নির্বাচনে আব্দুল জব্বার চৌধুরী দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার তিনি নেমেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে হারাতে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র সহ ৩ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তাকে হটাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি ও সদস্য আবদুল্লাহ কবির লিটন। মুজিবুর রহমান দক্ষিণ বাঁশখালীর একমাত্র প্রার্থী হওয়ার আঞ্চলিক টানে তার প্রতিই ভোটারদের আগ্রহ বেশি হবে ধারণা বাঁশখালীর মানুষের।
চট্টগ্রাম ৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত নোমান আল মাহমুদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। কারণ সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম সিডিএ চেয়ারম্যান থাকাকালীন নগরীতে তার হাত দিয়ে দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হয়। সেই তুলনায় সংসদ সদস্য হিসাবে নোমান আল মাহমুদ সময় পেয়েছেন বছর খানেক। এর আগে সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর কারণে শূন্য আসনে নির্বাচন করে জয় লাভ করেছিলেন নোমান আল মাহমুদ।
Discussion about this post