চট্টগ্রাম, ১৯ মে, ২০২৫:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির ১২ ঘণ্টা পর মো.ইউনূস (৫০) নামে ওই সৌদি প্রবাসীকে উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। গত রোববার (১৮মে) দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের উত্তর ঢেমশা মাইজপাড়া এলাকা থেকে অপহরণ করা হয় ইউনুসকে। একই দিন মধ্য রাত ১২ টার দিকে উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হিলমিলি নিজ বাড়ি এলাকা থেকে ওই প্রবাসীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহৃত প্রবাসী ইউনূস উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হিলিমিলি গ্রামের আজগর আলী মিয়াজীর বাড়ির আলী আহমদের ছেলে। তিনি ঢেমশা ইউনিয়নের উত্তর ঢেমশা মাইজ পাড়ায় তার নতুন ক্রয়কৃত মালিকানাধীন একটি সেমিপাকা বাড়ি পরিদর্শনে গেলে সেখান থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহরণের কয়েক ঘণ্টা পর প্রবাসীর স্ত্রী নাসিমা আক্তার বাদি হয়ে সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়ার মো.ইউনূসের ছেলে মো.সাকিব (২৪), একই এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. আকিল (২৩), একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আলমগীর পাড়ার মৃত সিদ্দিক আহমদের ছেলে মো. ইমন (২৩) ও উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হিলমিলি এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. এনাম (৩৫) সহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে অভযুক্ত করেন।
জানা যায়, ইউনুস রোববার সকালে তার নিজ গ্রাম আমিলাইষ ইউনিয়ন থেকে ঢেমশা ইউনিয়নে তার মালিকানাধীন একটি সেমিপাকা বাড়ি পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে দুপুর ১২ টার দিকে অভিযুক্ত মো.সাকিব , মো. আকিল ও মো. ইমনসহ আরও ১০-১২ জন মিলে প্রবাসী ইউনূসকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে দুপুর ২ টার দিকে অপহরণকারীরা ইউনূসের মুঠোফোন থেকে তার মেয়ে তাসমিয়া তাহসিন তামান্নার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিয়ে জানায়, ইউনূসকে অপহরণ করা হয়েছে এবং এনু মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে অভিযুক্ত মো. এনামের হাতে দুই লাখ টাকা দিলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। অন্যথায়, ইউনূসের অশ্লীল ভিডিও ও ছবি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে বিকাল ৩ টার দিকে অপহরণকারীরা পুনরায় ইউনূসের মুঠোফোন থেকে তার ছেলে যায়েদ মাহমুদ তৌকিরকে মুঠোফোনে কল দিয়ে সর্বশেষ এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তবে ইউনুসের স্ত্রীর অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ইউনূসকে উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে রাত ১২ টার দিকে আমিলাইষ ইউনিয়নের দক্ষিণ হিলমিলি এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় ইউনূসকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত প্রবাসীর ছেলে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মো. আসিফ উদ্দিন বলেন, আমার বাবা দীর্ঘ আট বছর পর সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। অপহরণকারীরা আমার বাবার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে আমার মুঠোফোনে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেছে। অপহরণকারীরা বাবার মুঠোফোন ও নগদ অর্থ লুটে নিয়েছে । সেগুলো এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আমার বাবা মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছেন।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, প্রবাসী ইউনূসকে অপহরণের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের পরপরই তাকে উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনার একপর্যায়ে মধ্য রাতে আমিলাইষ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হিলমিলি এলাকা থেকে তাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িতরা তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে গা ঢাকা দিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
Discussion about this post