চট্টগ্রাম, ১৩ মে, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চোখের সামনে হয়েছে। তত পরিণত বুদ্ধি হয়নি। তখন ক্লাশ ফাইভের ছাত্র। কিন্তু আমরা আবেগটা দেখেছি। ক্ষোভ দেখেছি। স্বাধীনতার পরে মানুষের ভেতর ক্ষোভ ছিল। সেজন্য এক ধরনের নাট্য আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন অনেক কিছু কিন্তু হয়েছে। আমাদের সময়টা ছিল একটা উত্তাল সময়। সেই সময়ে যখন আমরা বড় হচ্ছিলাম। বুদ্ধি হচ্ছিল বা আমরা পড়াশোনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছিলাম, তখন পড়াশোনার বাইরে কিন্তু আমাদের বিশাল একটা জগৎ ছিল। জগৎটা কি রকম- সেটা হচ্ছে দেশ, সমাজ, পরিবার, হতাশা। সবকিছু মিলে একটা একটা সময় ছিল। বর্তমান যারা আছে সেটা তারা আসলে বুঝবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
আজ শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সুধীজনের সাথে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা সংক্রান্ত মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ডলার হতে ১০০ বছর লাগবে স্বাধীনতার পর পর বিশ্ব ব্যাংকের চিফ ইকোনোমিস্টের এমন ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কিছু মিলে স্বাধীনতার পর পর আমাদের একটা হতাশা গ্রাস করেছে। স্বাধীন তো হয়েছে, এদেশ বারটা বাজবে। যে কারণে জাতির পিতাকে হত্যা করার পরও আমরা সহ্য করেছি। অথচ এটা সহ্য করার কথা না।
আহমদ কায়কাউস আরও বলেন, কিন্তু আজকে পঞ্চাশ বছরে সৌভাগ্যক্রমে জাতির পিতার কন্যার মাধ্যমে আমাদের বোধোদয় হয়েছে যে আমরা পারব। আজকে বুঝতে পারছি জাতির পিতা যে একটা কথা বলেছিলেন বা যে রকম আবেগ নিয়ে করেছিলেন, তার পিছনে কিন্তু একটা যুক্তি ছিল। স্বপ্ন ছিল এবং করা (পারা) সম্ভব ছিল।
তিনি বলেন, চিন্তা করে দেখেন, আপনার সাথে আজকে সময়ের কিরকম পার্থক্যটা হয়েছে। এই পার্থক্য যেটা হয়েছে সেটা দৃশ্যমান। কিছু দিন আগে আমাদের ঈদ গেছে। এখানে অনেকে উপস্থিত আছেন। এখানে যাদের একাধিক সন্তানও আছে। আমরা কিন্তু পেয়েছি, এক শার্ট এক প্যান্ট, তাও পাব কিনা নিশ্চয়তা ছিল না। এখন কিন্তু সন্তানরা কয়টা ড্রেস পাচ্ছে তার কিন্তু ইয়ত্তা নেই। এগুলোর এখন খোঁজও রাখে না। আমরা কিন্তু এসব লুকিয়ে রাখতাম। তারপর জুতাটা। নতুন জুতা পরার পরে আমাদের পায়ে ফোস্কা পড়ে যেত।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস আবেগ আপ্লুত হয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, আমরা জীবিত আছি। আমরা আশা করি যে আমরা মরার আগে যাতে আরও কিছু করে যেতে পারি। আমি এই চট্টগ্রামের সন্তান। আমার কাছে মনে হয় আমি যা পেয়েছি, আমি যদি কিছু আপনাদের দিয়ে যেতে পারি, সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
গভায় তিনি চট্টগ্রামে চলমাল প্রকল্পগুলোর কাজ যথাযথ সময়ে সম্পন্ন করার জন্য কর্মকর্তাদের তাগাদা দেন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আযম।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম সহ চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধি, চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
Discussion about this post